7.8 C
New York

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি আর না থাকি দুর্নীতি হতে দেবো না

Published:

অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নতুন উপাচার্য। আজ (২৮ মার্চ) ১২তম উপাচার্য হিসেবে বিএসএমএমইউর দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য হিসেবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি আর না থাকি দুর্নীতি হতে দেবো না। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ মতামত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মিরাজ।

জাগো নিউজ: বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব প্রাপ্তিতে আপনার অনুভূতি কেমন?
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: আমি দায়িত্ব পাবো সেটা আগে থেকে জানতাম না বা অনুমানও করতে পারিনি। সাধারণত এসব পদে কেউ এলে আগে থেকেই একটু বোঝা যায়।

তবে এ বিষয়টি পুরোপুরি আমার ধারণার বাইরে ছিল। প্রজ্ঞাপনের আগ পর্যন্তও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যেহেতু স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আগে সংসদ সদস্য হয়েও মানুষের জন্য স্বাস্থ্যখাতে আমার অংশগ্রহণ বাড়ানোর চিন্তা ছিল। তবে সেটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, অবশ্যই সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করবো।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: একজন উপাচার্য কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দিতে চান। আপনার নিজস্ব কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে?
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: এটি দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমি চাই এটি একটি গৌরবোজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। সব প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রশাসন হবে। এখানে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা হবে। কেউ যেন সেবাবঞ্চিত না হয়, চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারিত না হয়। এ বিষয়গুলো অবশ্যই নিশ্চিত করবো।

বিএসএমএমইউ হলো চিকিৎসক তৈরির কারখানা। আমার চাওয়া হলো আদর্শ শিক্ষক তৈরি করা। স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্ব দেওয়া। কেউ যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়। এছাড়া মানসম্পন্ন গবেষণার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক কথায় চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা এ তিন বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হবে।

জাগো নিউজ: বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল। দীর্ঘ সময়েও এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। এর কারণগুলো আমাকে প্রথমে জানতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেবো। আমার ইচ্ছে আছে ‘ফি ফর ওয়ার্ক সিস্টেম’ চালু করা। অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে পয়সা। যারা সরকারি চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসরে গেছেন, কিন্তু কাজ করতে চান তাদের থেকে সেবা নেওয়া। আরেকটি হলো, ‘টেকনোলজি ট্রান্সফার’। অর্থাৎ চিকিৎসকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিশ্বমানের ফ্যাকাল্টিদের স্বল্পমেয়াদে ট্রেনর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

জাগো নিউজ: বিএসএমএমইউতে অনিয়ম-দুর্নীতি, রাজনীতি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ভাবছেন।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: নেত্রী আমাকে অনেক আশা করে এখানে দিয়েছেন। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি থাকি আর না থাকি কোনো দুর্নীতি হতে দেবো না। আমার টাকা দরকার নেই। আমি মনে করি, একটা প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি সৎ থাকে তাহলে অর্ধেক কাজ এমনিতে হয়ে যায়। তাহলে অন্যরা অসৎ হওয়ার সাহসেই পাবেন না। আমি যদি অসৎ হই তাহলে অন্যরা ভাববেন ভিসি সাহেব করতে পারলে আমাদের অসুবিধা কোথায়। তাই আমার ফেল করার কোনো সুযোগ নেই। হয় আমি সুষ্ঠুভাবে চালাবো, না হয় বলবো চেষ্টা করেছিলাম পারলাম না। কিন্তু এখানে কোনো দুর্নীতি হতে দেবো না।

আরও পড়ুন

আমি জানি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আমাকে যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছিল তখন সেখানেও এমন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, দেখো আমি তোমাকে একটা খারাপ জায়গায় পোস্টিং দিয়েছি তুমি পারবে তো? আমি তখনও বলেছি ইনশাআল্লাহ, আমার কোনো ভয় নেই। আমি চাই জাতির জনকের নামে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন সবধরনের প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত থাকে। আমার চাওয়া সবাইকে নিয়েই কাজ করবো।

জাগো নিউজ: বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ তদন্তে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না?
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: আমাকে যদি কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবো। এখানে আমার চাওয়ায় কিছু আসে যায় না। কারণ এখানে একটা ভালো একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে, সিন্ডিকেট রয়েছে। সুতরাং এখানে হাত-পা বাঁধা, আইনের বাইরে কিছু করতে পারবো না।

জাগো নিউজ: দেশের এমবিবিএস ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা কমছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এ অবস্থায় মেডিকেলে চিকিৎসাব্যবস্থার মানোন্নয়নে আমাদের করণীয় কী?
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক: ২০২৪ সালের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি যদি না পাই তাহলে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। আমাদের চিকিৎসকরা দেশে কাজ করতে পারবেন, কিন্তু বিদেশে যেতে পারবেন না। বিদেশে কোনো চাকরিও পাবেন না, পড়তে যেতেও পারবে না। ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিতেও পারবে না। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে। কারণ তারা এখানে পড়াশোনা শেষে বিদেশে যাবে চাকরি করতে বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে। সেটি তো সম্ভব হবে না।

ডব্লিউএফএমইর আন্তর্জাতিক কমিটির প্রধান বিশেষত তিনটা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মেডিকেল শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়। এক. ভৌত অবকাঠামো; দুই. ফ্যাকাল্টি; তিন. শিক্ষা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। আমাদের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩০-৪০টি মেডিকেল কলেজ আছে। যারা এ শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম। এজন্য আমি বলেছি যে, আগে এগুলো দিয়েই আবেদন করা। সর্বশেষ যতটুকু জানি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কাজ করছেন। আমি মনে করি, এখানে দরকার হলো, দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা।

এএএম/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Related articles

Recent articles

spot_img