9.5 C
New York

চুরির অভিযোগে বদলি, আদেশ পেয়েই স্টোর থেকে ওষুধ চুরি!

Published:

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের স্টোর থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধ চুরির অভিযোগে হাসপাতাল থেকে বদলির আদেশ পাওয়ার দিনই এ ওষুধ সরানোর ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, অফিস শেষ হওয়ার পর ৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সময়ে স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওষুধ চুরির অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলির জন্য সুপারিশ করেন। এরপর তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলি করা হয় মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

অভিযোগ রয়েছে, বদলির আদেশ পাওয়ার পর ঈদের আগে (৯ এপ্রিল) শেষ কার্যদিবসে বিকেলে স্টোর থেকে ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যান সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার পর অফিসের কার্যদিবস শেষ হলে সাইফুল ইসলাম একটি ইজিবাইক নিয়ে তার দপ্তরের সামনে রেখে সেখানে ওষুধ তুলছেন। পরে সেই ওষুধ নিয়ে যান যশোর ঘোপ নওয়াপাড়া রোড়ের দিকে। যদিও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি সাইফুল।

যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, স্টোর কিপার সাইফুল তাকে বলেছেন, কিছু ওষুধ পরিবর্তন করার জন্য তিনি স্টোর থেকে বাইরে নিয়ে গেছেন। তবে ওষুধ যদি তিনি পাচার করেন, আর তা প্রমাণিত হয় তাহলে স্টোর কিপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে সাইফুল ইসলাম যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের স্টোর কিপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে বাইরে ওষুধ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৪ মার্চ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উঠে আসে।

কমিটির সদস্য মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটির সভাপতি যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তাকে বদলির নির্দেশ দেন।

মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পেয়েছি। আগামী মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি আমি আবার তুলে ধরবো।

গত ৯ এপ্রিল খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক সাইফুল ইসলামকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করেন। বদলির খবর পেয়ে ওইদিনই বিকেল ৪টার দিকে অনেক ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে ফেলেন। এর আগে ৭ এপ্রিলও ওষুধ বাইরে নিয়ে যান স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। এ ব্যাপারে আমি কোন বক্তব্য দেব না।

যার ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, তার নাম মনির হোসেন। তিনি হাসপাতালের সিলিন্ডার বহন করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে যত অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে, তা আনা-নেওয়া করেন তিনি।

মনির হোসেন বলেন, ‘৯ এপ্রিল সাইফুল ইসলাম আমাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে আসেন। বলেন, এই ওষুধগুলো ঠিকাদারের কাছে বদল করতে হবে। আমি ইজিবাইকে ওষুধ নিয়ে খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে আসি।’

সাইফুল ইসলামের বদলির কারণে এখন হাসপাতালের স্টোরের ওষুধ বুঝে নিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট রতন কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো সব ওষুধ বুঝে পাইনি। কিছু ওষুধের গড়মিল পাচ্ছি। হিসাব সম্পন্ন হওয়ার পর বলতে পারবো কত ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরানো হয়েছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে সাইফুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ওষুধ বুঝে নেওয়ার কাজ চলছে। সে যদি কোনো ওষুধ বাইরে নিয়ে যায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মিলন রহমান/এসআর/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Related articles

Recent articles

spot_img