‘লাইট কনফেকশনারি’ শব্দবন্ধ লিখে গুগলে সার্চ দিলে আপনি কিছু খুঁজে পাবেন না। কিন্তু আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে হাতের বাঁ দিকে এগোলে দুই দোকানের সমান আয়তন নিয়ে ছিল বড় দোকানটি। কাচের বাক্সে রাখা থাকত কেক। সেসব কেকের ওপর দেওয়া থাকত চিনির মিহি প্রলেপ, যাকে ‘সুগার আইসিং’ বলে, এমনটা পরে জেনেছি। কিছু কেকের ভেতরে থাকত ক্রিমের ঘূর্ণি, ‘সুইস রোল কেক’ বলে তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা নিউমার্কেটে ঘুরতে যেতাম আর এক পিস কেক দুই বন্ধু ভাগাভাগি করে খেতাম।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পালা শেষ হওয়ার আগেই দোকানটা বন্ধ হয়ে যায়। এমন অনেক দোকানই এখন আর নেই। আমার স্মৃতি থেকেও দোকানটা ধীরে ধীরে ‘নাই’ হওয়ার পথে। ইদানীং নিউমার্কেটে গেলে অলিম্পিয়া পার হয়ে দোকানটা কখনো ছিল, এমন মনেও পড়ে না। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জিনাত বুক স্টোরও বন্ধ হয়ে গেছে। বেইলি রোডের সাগর পাবলিশার্সও বন্ধ। ঢাকা শহরের অলিগলি–রাস্তা থেকে এমন অনেক কিছুই মুছে যাচ্ছে আমাদের অগোচরেই, হয়তো আমাদের স্মৃতি থেকেও।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় চৌরাস্তার কোনায় ছোট্ট একটি দোকান আছে—নিউ ক্যাফে কর্নার। সেখানে ৭০ বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে মাটন কাটলেট। সেই দোকানের এক কর্মচারীকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কত বছর এখানে কাজ করছেন? তিনি হেসে বললেন, ‘৩০ বছর তো হইল।’ দশকের পর দশক ধরে তাঁরা কেবল একটি খাবারের পদ নন, স্মৃতি আর ইতিহাসও পরিবেশন করে চলেন নতুন নতুন প্রজন্মের পাতে। শৈশবের ঠোঙা হাতে আমরা পথ হাঁটি। কিন্তু সে পথ ক্রমে বদলাতে থাকে আর ঠোঙা গড়িয়ে যায়।