বাংলাদেশ একটি বহুস্তরী, অস্পষ্ট ও অমীমাংসিত ইতিহাসকে ধারণ করে। সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত বেহাত বিপ্লব (আগামী, ঢাকা, ২০০৭) আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মুক্তিযুদ্ধের ফল জনগণের কাছে কোনো দিনও পৌঁছায়নি। আমাদের স্ববিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিহাসকে এমন এক হাতিয়ার করতে চাইল, যা দিয়ে তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবে।
গত এক দশকে রাষ্ট্র ও তার অতি উৎসাহী বন্ধুরা ইতিহাসকে প্রতিপক্ষ হত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে একমুখী পর্যবেক্ষণের কোনো অবকাশ নেই। লীগ সরকার যেমন প্রতিপক্ষকে ইতিহাসের বইয়ে জায়গা দেয়নি, বিএনপি সরকারও প্রতিপক্ষ হয়ে ঠিক একই কাজ করেছে।
দুই রাজনৈতিক দলই ইতিহাস বিকৃতির কাজে শক্তি প্রয়োগ করেছে। পার্থক্য এই যে বিগত সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে ইতিহাস পরিবর্তনের কাজে আরও নিপুণ হয়ে উঠেছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার কাজ ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপ, চোখ রাঙানো ও সেন্সরশিপের কারণে নাটকীয়ভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে। এখনো যদি এটি অব্যাহত থাকে, তাহলে ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে জাতীয় সব স্রোতের পুনর্মিলনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে আসবে। ইতিহাসযুদ্ধে শুদ্ধিকরণ, খারিজ ও প্রতিশোধ ১৯৭২ সাল থেকে আজ অবধি সব আমলেই অল্পবিস্তর হয়েছে।
ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক বিদ্রোহের পর আমরা জটিল এক পরিবর্তনের প্রথম অস্থিতিশীল মুহূর্তে আছি। গোড়ায় গলদের ব্যাপারে সাবধান, ইতিহাস নিয়ে আবারও যেন খেলা শুরু না হয়।
-
ড. নাঈম মোহায়মেন ইতিহাস-গবেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার অধ্যাপক। ই–মেইল: [email protected]