কিছু কথা খুবই স্পষ্ট এবং বিশুদ্ধ পানির মতো পরিষ্কার, এসব নিয়ে ঘোরানো পেঁচানোর কিছুই নেই, একদমই নেই। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তারা ভালোবেসে দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যেই যুদ্ধ করেছিলেন। এই একটি লক্ষ্য ছাড়া আর কোনো ইচ্ছে বা অভিলাস তাদের কারোরই কখনোই ছিল না, কোনো কালেই ছিলো না।
অনেকেই সেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, আর যারা বেঁচে গেছেন তারা তাদের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ দেখেছেন। সেসব মুক্তিযোদ্ধারা কখনো উত্তর প্রজন্ম তাদের সেই সাহসিকতা, আত্মত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধকে বেঁচে বেঁচে ধুয়ে ধুয়ে সুবিধা নেবেন সেই চিন্তা কস্মিন কালেও করেননি। অবশ্যই কোনোভাবেই করেননি, এমন চিন্তাধারার হলে তারা যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করতেন না, ১৯৭১ এ ঘরের মধ্যে চকির তলায় ঘুমিয়ে থাকতেন।
সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা কখনো স্বাধীন দেশ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার চিন্তা করেননি, তাদের প্রকৃত সন্তানেরাও করেন না। কেন তারা সুবিধা নিয়ে তাদের বাবা-মায়ের এই মহৎ কাজকে ছোট করবেন? নিজের মাথা হেট করবেন? তাদের বাবা-মা দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এটা তো তাদের জন্য সবচেয়ে গর্বের পরিচয়। তাদের বাবা-মা তাদের দেশের গর্ব। এর তো কোনো বিনিময় হতে পারে না, মূল্য থাকতে পারে না, তাহলে তারা কীভাবে কোটা সুবিধা নিয়ে অমূল্যকে মূল্যে আটকে ফেলবেন?!
যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে সুবিধা নেন বা নিতে চান তারা অবশ্যই ধান্দাবাজ এবং তাদের বাবা-মার মুক্তিযোদ্ধা সনদ কতটা সত্য সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ এবং দ্বিধা আছে বৈকি।
এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগ, ইচ্ছে করলেই মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর সব প্রান্তের খবর হাতের মুঠোয় ভরে ফেলা যায় অন্তর্জালের বদৌলতে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম যথেষ্ট উদ্যমী এবং কঠোর পরিশ্রমী। সবাই যে যার যোগ্যতা নিয়েই এগিয়ে যায়, ক্ষেত্র বিশেষে মাঝপথে নানা রকমের প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হলেও লক্ষ্য স্থির ও দৃঢ় প্রত্যয় থাকলে অভিষ্ট লক্ষে অবশ্যই পৌঁছে যায়।
সেখানে ডিজিটাল ডিজিটাল বলে গলাফাঁটানো গোষ্ঠী কেনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান-নাতি-পুতিদের কোটা সুবিধা দিতে তৎপর হয়ে উঠলেন? উদ্দেশ্য আসলে কি? এটা তো ডিজিটাল কিছু হলো না, উল্টো মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও সাহাসিকতাকে একটা বিশেষ নিয়মে বেঁধে দিয়ে তাদের আত্মত্যাগকে কোটা প্রথা দিয়ে শোধ দেওয়ার বিরক্তিকর বিফল চেষ্টা মাত্র।
যেভাবেই হোক সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন ভোট পেয়ে জাদুকরি গলার জোরে বারংবার ক্ষমতায় গেলেও ক্ষমতা তো ক্ষমতাই। সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে ক্ষমতাসীনরা ভালো খায়, ভালো পরে, নিত্য ভালো সফরে যায়, ভালো ভালো মানুষের সাথে ওঠেবসে, সভ্য জগতে চলাফেরা। তাদের কাছে থেকে ন্যূনতম ভদ্রতা ও সভ্যতা তো আশা করাই যায়, নাকি সেটাও আশা করা যাবে না?
বেশি কিছু আশা করা ভুল জানতাম, ক্ষমতাসীনদের থেকে সভ্য ভাষা আশা করা কি খুব বেশী কিছু চাওয়া?
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে, রাষ্ট্রপক্ষের বিবৃতি হবে গোছানো, যুক্তিসঙ্গত এবং আশাব্যঞ্জক। তাদের বক্তব্য যদি বস্তিপট্টির খিস্তি খেউর মার্কা হয়! তাহলে তো পাল্টা উত্তর শোনার প্রস্তুতি রাখতেই হবে। ব্যাপক দুর্নীতিকে আড়ালে রাখতে চোখে শশার টুকরার প্রলেপ দিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে কথার মাঝে সর্বোচ্চ ঘৃণিত শব্দ টেনে আনলো কে বা কারা? উদাহরণ এর কি এতই অভাব ছিল? কথা বলতে না জানলে নীরব থাকা শতগুণ শ্রেয়, নতুবা ঢিল মেরে পাটকেল কে খায়নি কবে?
আর কেউ যদি পাগল হয়ে আবোল-তাবোল বলেই বসে সেই প্রত্যুত্তর অবশ্যই জোরালো ও বলিষ্ঠ হওয়া উচিত। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সেই বিশেষ বেহুশ গোষ্ঠীর বলা অতি কষ্টদায়ক শব্দকেই কেন বেছে নিতে হলো! প্রতিবাদের জন্য আর কোনো শব্দ বাংলা ভাষার ভাণ্ডারে ছিলো না? কাক তো কা কাই করবে, দুষ্টু কোকিল কু কু। কিন্তু কেনো কোনো বুলবুল, ময়না, টিয়ে পাখির গলা পাওয়া গেলো না? কেনো সবাই কষ্টদায়ক শব্দই নিলো? অভিনব, বলিষ্ঠ, জোরালো প্রতিবাদের উদাহরণ তো বাংলার ইতিহাসেই ভুরিভুরি আছে। প্রতিবাদের ভাষা এমনটা হলে বেহুশদের চৈতন্য দান করবে কে?
জগতে যোগ্যতম জাতিই কেবলমাত্র টিকে থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং হওয়া উচিত। তাই মুক্তিযোদ্ধারাও সবসময়েই তাদের আপন আলোতেই আলোকিত, সম্মানিত। কোটা দিয়ে তাদের বেঁধে ফেলার চেষ্টা না করাই শ্রেয়। তেমনি পরিশ্রমী, মেধাবী, সাহসীরা এগিয়ে যাক, কোটা প্রথায় বাঁধা না পড়ুক কারণ তাদের এগিয়ে যাওয়া একটি দেশের সত্যিকারের উন্নয়নে পরিপূরক এবং সহায়ক যেমন উদ্যোগ শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ এ নিয়েছিলেন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সব ধরনের কোটাপ্রথার বিপক্ষে এবং আলোচনা, সমালোচনা ও প্রতিবাদের ভাষা শালীন হওয়ার পক্ষে। ধন্যবাদ সবাইকে।
এমআরএম/এএসএম
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]