‘একদিন সকালে অস্বস্তিকর স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে গ্রেগর সামসা দেখতে পায়, নিজের বিছানায় সে একটা আরশোলায় রূপান্তরিত হয়েছে।’
‘মেটাফরফসিস’—ফ্রানৎস কাফকা
উপন্যাসের শুরুর বাক্যটা লেখা নাকি সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। কাহিনি, প্লট, চরিত্র কেমন হবে, তার একটা আগাম বার্তা পাওয়া যায় প্রথম বাক্যে। অতিদূর বন্দরের আলো অনুসরণ করে জাহাজ যেমন নোঙর করে, পাঠকও পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ওলটানোর আগে প্রথম বাক্য থেকে একটা ধারণা পান। খুব কম ঔপন্যাসিক আছেন, যাঁরা শুরুর বাক্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। একের পর এক পৃষ্ঠা ছিঁড়ে কিংবা ব্যাক স্পেস দেওয়ার পর হঠাৎ বিদ্যুৎ–চমকের মতো পাওয়া যায় প্রথম লাইন। প্লট-চরিত্র ভেবে রাখলেও যথাযথ বাক্য না পাওয়ায় কত উপন্যাস যে এখনো ভ্রুণেই রয়ে গেল, সে শুধু লেখকেরাই জানেন। আবার কোনো প্রকার আগাম প্লট-চরিত্র ছাড়াই স্বপ্নে পাওয়ার মতো একটি বাক্য থেকেই সৃষ্টি হতে পারে মহৎ কোনো উপন্যাস। জানা নেই ‘নিঃসঙ্গতার এক শ বছর’ লেখার সময় গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস (৬ মার্চ ১৯২৭-১৭ এপ্রিল ২০১৪) এ দুইয়ের কোনটির ভেতর দিয়ে এগিয়েছেন। তবে সেই শুরুর বাক্যটি নিশ্চিত আজও আপনাকে বরফ আবিষ্কারের শীতল অনুভূতি এনে দেবে। স্মৃতি হাতড়ে প্রথম বাক্যটি আবার পড়া যাক—‘বহু বছর পর, ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মনে পড়ে যাবে সেই দূর বিকেলের কথা, যেদিন তাকে সঙ্গে নিয়ে বরফ আবিষ্কার করেছিল তার বাবা।’