সেমিনারে যুক্ত হয়ে প্রভাত পাটনায়েক বলেন, বি–উপনিবেশায়নের (উপনিবেশবাদ থেকে সামগ্রিক মুক্তির প্রক্রিয়া) পর তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ স্বীকার করে নিয়েছিল যে শিক্ষা হতে হবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে এবং বিনা মূল্যে বা তুলনামূলক কম খরচে। কিন্তু নব্য উদারতাবাদ এর পুরোপুরি উল্টো। নব্য উদারতাবাদ শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করে এবং বেসরকারীকরণ ঘটায়। ফলে দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তরাও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এমন ব্যবস্থায় টাকা যার, শিক্ষা তার। বরাদ্দ কম হওয়ায় এই নব্য উদারতাবাদের যুগে পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ছে। এ ব্যবস্থায় শিক্ষায় খরচকে একটি বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়। কারণ, এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বড় চাকরির নিশ্চয়তা দেয়। শিক্ষার্থীদের আত্মকেন্দ্রিক, ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ফল পেতে আগ্রহী করে তোলাই এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য। নব্য উদারতাবাদ শিক্ষাকে কতিপয়ের প্রিভিলেজে (বিশেষ সুবিধা) পরিণত করে।
প্রভাত পাটনায়েক বলেন, জনগণের অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি করা ছিল শিক্ষাব্যবস্থার মূল ধারণা। এখন ধারণাটি হচ্ছে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বায়িত ব্যবসার অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি। কারণ, বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা আছে। এসব শাখায় তাদের লোক নিয়োগ করতে হয়। সব দেশে তারা একই ধরনের লোক নিয়োগ করতে চায়। এ জন্য তৃতীয় বিশ্বের সর্বত্র তাদের একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। নব্য উদারতাবাদী এই ব্যবস্থার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সেটি হয়ে থাকলে নব্য উদারতাবাদী পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তার জন্য একটি যথোপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা লাগবে। প্রয়োজন পড়বে স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের, যারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণ করবে না। তৃতীয় বিশ্বের জন্য এমন শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, যা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ বুদ্ধিজীবী তৈরি করবে, যাঁরা জনগণের পক্ষে কথা বলবেন।