14.7 C
New York

সরদারের পৃথিবীতে, সরদারের জানালায় | প্রথম আলো

Published:

১৯৪৯ সালে ঢাকার তাঁতীবাজারে পার্টির গোপন আস্তানা থেকে সরদার ফজলুল করিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লা—এক জেল থেকে আরেক জেলে আবর্তিত হতে থাকে তাঁর বন্দিজীবন। জেলে বসেই তিনি বিভিন্ন দাবি আদায়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে অনশন ধর্মঘট করেছেন। পাকিস্তান কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলে থেকেই।

সরদার ফজলুল করিমের চিন্তাজগতের যে অনুসন্ধান আমরা করেছি, তা নিয়ে প্রথমা প্রকাশন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আমার পৃথিবী বইটি। দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন ও সাহিত্য—ছয়টি পর্বে বিভক্ত এই বই সামগ্রিকভাবে তাঁর চিন্তার ধরন ও বিস্তৃতি বুঝতে সহায়ক হবে।

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী মার্ক্সীয় দর্শনে আস্থাশীল সরদার ফজলুল করিম দর্শনের আরেক প্রান্ত ভাববাদকে অস্বীকার করেননি। এই দুই আদর্শকে তিনি নিজের মতো করে মেলাতে পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই তাঁর বিচরণ ছিল মার্ক্স-এঙ্গেলসের জ্ঞানের দুনিয়ায়। অনুবাদ করেছিলেন ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের অ্যান্টি-ডুরিং। আবার প্লেটোর রিপাবলিক, ডায়ালগ ও অ্যারিস্টটলের পলিটিকসও অনূদিত হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে। তিনি মনে করতেন, ভাববাদ আর বস্তুবাদের দ্বান্দ্বিকতাই জীবনকে গতিশীল রাখে। মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকে দুটোকে সঙ্গী করেই।

জীবন-মৃত্যুর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলে কিংবা মৃত্যু আমাদের মুখোমুখি করে যে অতিকায় জিজ্ঞাসার সামনে, সরদার ফজলুল করিমের দার্শনিক মন সন্ধান করেছে এসব সমস্যার সমাধান। তিনি জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বকে বুঝতে চেয়েছেন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সূত্রে, রূপান্তরের নিয়মে। জীবনকে দেখেছেন বিশাল ক্যানভাসে, যেখানে মৃত্যু একটি শব্দমাত্র। জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্বে জয় হয় জীবনেরই। ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু হলেও মানুষের মৃত্যু হয় না।

সরদার ফজলুল করিমের কাছে জীবন একমুখী প্রশ্নোত্তরের ব্যাপার নয়। আশা-হতাশা আর ঘাত-প্রতিঘাত নিয়েই জীবন। হতাশাশূন্য নিরেট আশা অর্থহীন। কারণ, একমাত্রিকতার অস্তিত্ব নেই। দর্শন আর জীবন নিয়ে এ রকম আলাপ সহজেই পাঠক পেয়ে যাবেন এই বইয়ে।

Related articles

Recent articles

spot_img