আসলে নিজেকে দোষী ভাবার এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। মনোবিদ বলছেন, আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেই এমনটা ঘটে। এ জন্য ইতিবাচক চিন্তার বিকল্প নেই। অর্থাৎ নিজেকে প্রশ্নগুলো ‘না’–এর বদলে ‘হ্যাঁ’ দিয়ে করতে হবে। ‘আমি কী করিনি’, ‘আমার কী নেই’–এর বদলে ভাবতে হবে ‘আমি কী করেছি’, ‘আমার কী আছে।’
ফেরা যাক মেঘনার কথায়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল নিজেকে দোষারোপের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে মেঘনার সামনে দুটি পথ খুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমত, এটা বুঝতে হবে—যাঁরা তাঁকে বিয়ে না হওয়ায় পুরোপুরি ব্যর্থ ভাবছেন, তাঁদের চিন্তায় ত্রুটি আছে। তাঁদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজের গায়ের রং নিয়ে মনে গ্লানি না রেখে নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। মেঘনাকে ভাবতে হবে—তিনি শিক্ষিত, স্বাবলম্বী, ভালো গান গাইতে পারেন। এগুলোকেই তাঁকে বড় করে দেখতে হবে। মনে গ্লানি এলে এসব ভাবনা এনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এই মনোবিদের এমন পরামর্শ ভাবনার আরেকটি পথ দেখিয়ে দেয়। পরিবারের কোনো বিপর্যয়, সন্তানের অবাধ্যতা—এ সবকিছুর জন্য কখনোই কোনো মা একা দায়ী হতে পারেন না। অন্যের কথা শুনে আবেগপ্রবণ না হয়ে মায়েদের যুক্তিবাদী হওয়া প্রয়োজন। একজন মাকে ভাবতে হবে, সন্তানের যে সমস্যা হচ্ছে, সে জন্য কী কী বিষয় ভূমিকা রাখছে। সন্তানের বন্ধু, মানসিক অবস্থা বিবেচনা করেই তাঁকে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে খুব ইতিবাচক একটি উদাহরণ হতে পারে ২০২৩ সালে প্রচারিত নাটক অনন্যা। সন্তানকে কোথায় রেখে চাকরি করবেন, এ নিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবারের দোষারোপ, কর্মক্ষেত্রে তির্যক মন্তব্যে হতাশায় ডুবে যেতে যেতে মা অনন্যা চৌধুরী নিজেই দিবাযত্ন কেন্দ্র খোলেন। দেশজুড়ে ২০টি দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। পুরস্কৃত হন। সফলতা পান। এই মা নিজেকে দোষারোপ করেননি। তিনি জানতেন, পারিপার্শ্বিকতার কারণেই তাঁর এমন পরিস্থিতি। আর তাই নিজেকে না বদলে তিনি চারপাশটা বদলানোর চেষ্টা করেছেন।
এভাবেই নেতিবাচক চিন্তাকে দূরে ঠেলে ইতিবাচক চিন্তা করলে মেঘনারা আর মেঘে ঢেকে যাবেন না; বরং মেঘই রঙিন হয়ে রাঙিয়ে দেবে জীবনের আকাশ।