25.1 C
New York

শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনন্য শেখ হাসিনা

Published:

“আমি এতটুকু আশ্বাস দিতে পারি; আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী না, আমি জাতির পিতার কন্যা, আমি আপনাদের (শ্রমিকদের) প্রতিনিধি। আপনাদের কোনো সমস্যা থাকলে সেটা আমরা নিশ্চয় দেখব। আমি আর পাঁচটা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের মতো না। আমি কাজ করি…, আমি কাজ করি আমার দেশের কল্যাণে, আমার দেশের মঙ্গলের জন্য আন্তরিকতার সাথে। এভাবেই শ্রমিক অধিকার এবং কল্যাণে নিজের কথা তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা ও দেশের সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ – যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন।

এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে । যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক যেকোনো খাতে নিয়োজিত কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন।

রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে শেখ হাসিনার সরকার। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি পরিত্যক্ত কল-কারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমৃত্যু যার ভাবনায় ছিল মেহনতি মানুষের মুক্তি। এদেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন তিনি। তাইতো আজীবন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন।

বৈষম্যের বিরুদ্ধে যেমননি সোচ্চার ছিলেন, তেমনি ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর’ জন্য ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শ্রমজীবী মানুষকে কতটা শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন বঙ্গবন্ধু তার বিভিন্ন বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বঙ্গবন্ধু চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি চাকরি করেন আপনার মায়না দেয় ঐ গরীব কৃষক, আপনার মায়না দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়, আমি গাড়িতে চলি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলুন, ওরাই মালিক।’

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের প্রতি তার টান, দরদ, মমত্ববোধ কতটা তা ফুটে উঠে। কতটা শ্রমবান্ধব ও বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হলে একজন রাষ্ট্রনায়ক তার দেশের গরীব শ্রমজীবীদের দেশের মালিক বলে ঘোষণা দিতে পারেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর এমন ঘোষণায় নব জাগরণের প্রেরণা পায় এ দেশের শ্রমজীবীরা।

বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ হচ্ছে উৎপাদন, শিল্পোন্নয়ন, তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে নিহিত দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। তাই তিনি সেদিন তার ভাষণে বলেন, ‘শ্রমিক ভাইয়েরা, আমি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান করেছি, আপনাদের প্রতিনিধি ইন্ডাস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট, লেবার ডিপার্টমেন্টের শ্রমিক প্রতিনিধি বসে একটা প্ল্যান করতে হবে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে।’

নিজে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে শ্রমিকদের কল্যানে তাদের কাছ থেকেই মতামত গ্রহণ করে শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। শুধু নিজ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নয় বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষের মুক্তির কন্ঠস্বর ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন- ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে নেহনতি মানুষেরই জয়গান গেয়েছেন। বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত, এক দিকে শোষক, আর অন্য দিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।” এই ভাষণ সারাবিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। তিনি জানতেন শোষিত নিপীড়িত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে সাম্যতা আসবে না।

আর পিতার সেই আদর্শ ধারণ করে দেশের ও শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা লাভের পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবপ্রণীত সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকারের বিষয় সুদৃঢ়করণ করেন।

সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশ সমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা। ১৫ (খ) অনু্চ্ছেদে কর্ম ও মজুরীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে- কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসংগত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার; যুক্তিসংগত বিশ্রাম বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।

৩৪ অনুচ্ছেদে জবরদস্তি- শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম; এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে আইনত; দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হবে। শ্রমজীবীদের প্রতি বঙ্গবন্ধু নিখাদ ভালোবাসা ও আন্তরিকতার কারনেই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে মেহনতি মানুষের অধিকারের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

শ্রমজীবীদের কল্যাণে শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিবাচক ভাবনা, ভালোবাসা ও মমত্ব ও শ্রদ্ধাবোধের প্রভাব পড়ছে তার রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ওপর। পিতার মতো তিনি ও বিশ্বাস করেন শ্রমজীবী মানুষের কল্যান ও তাদেরকে উন্নয়নের গতিধারায় সম্পৃক্ত করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

গণকল্যানমুখী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছে এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। সব সেক্টরে বাড়িয়েছে শ্রমিকদের বেতন ভাতা।

বর্তমান সরকারের আমলেই, ‘‘শ্রম কল্যাণ নিশ্চিতকরণে ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’ ও ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রনয়ণ করা হয়েছে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা, ২০১৩’ এবং ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, ২০১১’। পাশাপাশি, গঠন কর হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল’। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতরকে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে।

শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে শ্রম পরিদফতরকে সম্প্রতি অধিদফতরে রূপান্তরিত করেছে বর্তমান সরকার। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সকল প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে ‘বর্তমান সরকার সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। এর ফলে এক কোটির ও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে এই শিল্প জোনগুলোতে। যত্রতত্র শিল্প স্থাপন না করে পরিকল্পিতভাবে দেশি বিদেশি সব বিনিয়োগকারী এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেন নিগৃহীত না হয়,অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষে ও নানামুখী ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী শ্রমিকদের জন্য শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দুইটি বহুতল শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।

শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আপ্রান চেষ্টা করে চলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও বিশ্বাস করেন এদেশের কৃষক শ্রমিক আর সাধারণ জনগণের মুখে হাসি ফুটলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে রাতদিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনিই দেশের সব অর্জন ও উন্নয়নের শেষ ঠিকানা।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/এএসএম

Related articles

Recent articles

spot_img