19.3 C
New York

যে লেখা পড়তে চাইবেন না মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ

Published:

সাকিব আল হাসান তো যেখানে গিয়ে দাঁড়ান, সেখানেই একটা হুলুস্থুল বাধে। একে তিনি মহাতারকা; ফেসবুকে সাকিবের প্রবল সমালোচকও তাঁকে সামনে পেলে সেলফি তোলার সুযোগ ছাড়ে না। জীবনে বহুবার সোজাসাপটা কথা বলে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন। বিজ্ঞাপনের বাজারে চড়া মূল্য তাঁর। কখনো কখনো তো ক্রিকেটার সাকিবের চেয়ে ‘মডেল’ সাকিবকেই বেশি ব্যস্ত দেখা যায়।

ব্যবসায়ী সাকিবই–বা বাদ যাবেন কেন! তামিমের সঙ্গে তিক্ত হয়ে পড়া সম্পর্কটাও মাঝেমধ্যেই তাঁকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দেয়। বেছে বেছে সিরিজ খেলতে চান বলে সাকিবকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝামেলায় পড়তে হয় বিসিবিকে। এর মধ্যে আবার ঢুকেছেন রাজনীতিতে। সঙ্গে মাঠের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে সাকিবের ওপর থেকে পাদপ্রদীপের আলো কখনোই সরে যায় না। শত বিতর্ক আর চাপের মধ্যেও মাঠের পারফরম্যান্সে ঠিক রাখতে পারার গুণটা অবশ্য কেবল তাঁর মধ্যেই দেখা যায়।

তবে এবারের বিপিএল ব্যতিক্রম। চোখের সমস্যার কারণে ঠিকভাবে খেলতেই পারছেন না। অবশ্য তাতেও সাকিবের ওপর থেকে ক্যামেরা সরছে কই! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকলে তো দেখা যাচ্ছে তাঁর জুতাও এখন একটা মহাখবর! ওয়ার্মআপে ফুটবল খেলছেন, সেই ফুটবলের বিশ্লেষণধর্মী ‘ম্যাচ রিপোর্ট’ চলে আসছে ফেসবুকে।

মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর দল ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবালও যে বিপিএলটা মনের মতো খেলতে পারছেন, তা নয়। ওপেনার হয়েও এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ১২৯ রান করেছেন ১১৬.২১ স্ট্রাইক রেটে। আর খেলার বাইরে আলোচনা-সমালোচনা তাঁকে নিয়েও আছে। সাবেক কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর পর বর্তমান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেও তামিমের সম্পর্ক তেমন উষ্ণ নয়।

সাকিবের সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা, বিশ্বকাপের আগে অবসরের ঘোষণা, নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎটাকে অস্পষ্ট রেখে দেওয়া—খেলার সমান্তরালে তামিম মানে এসব নিয়েও আলোচনা এবং সেসব আলোচনা প্রীতিকর হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রচারের আলো আর বিতর্কের কাঁটা তাই তাঁকেও কখনো ছাড়ে না।

সে তুলনায় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে বলতে হয় ভিনগ্রহের মানুষ। ক্রিকেটীয় প্রতিভা আর সামর্থ্যে যদি অন্যদের চেয়ে তাঁরা কিছুটা পিছিয়েও থাকেন, অধ্যবসায়ী চেষ্টা আর শুধুই খেলাটার দিকে মনোযোগ ধরে রেখে সে সীমাবদ্ধতাকে তাঁরা অতিক্রম করে ফেলেন। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটার মিলিয়েও তাই এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান (৫ ম্যাচে ২০২) মুশফিকের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিলেও খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৩৯ বলে অপরাজিত ৬৮ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস দুটিতে মুশফিক দেখিয়েছেন, এই সংস্করণের খেলাটা ভুলে যাননি এখনো।

পরশু সর্বশেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ২৪ বলে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহও জানান দিয়েছেন, বয়স যতই ৩৭ হয়ে যাক, টি-টোয়েন্টিতে এখনো বাতিলের খাতায় চলে যাননি। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৬৫.০৭ হয়ে যাওয়ায় যদিও এই ম্যাচের ভূমিকাই বেশি, তবে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচেও ব্যাট করেছেন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মাহমুদউল্লাহর এবারের বিপিএল-ব্যাটিংয়ে নির্বাচক হাবিবুল বাশারের চোখে যেটা বিশেষভাবে ধরা পড়ছে, বড় শটগুলো এখনো তিনি মাঠের বাইরে নিতে পারছেন অনায়াসে।

দারুণ ফিটনেস লড়াকু মাহমুদউল্লাহর আরেকটি জবাব। দল থেকে যখন বাদ পড়েন, সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ছিল তাঁর ফিটনেস নিয়েই। পরিশ্রমের বিনিময়ে সেই প্রশ্ন তুচ্ছ প্রমাণ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের সম্ভাব্যদের সামনের সারিতে এখন মাহমুদউল্লাহ। আরেকজন মুশফিক, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিয়েও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে আছে তাঁর ক্রিকেটসত্তা।

Related articles

Recent articles

spot_img