তাজউদ্দীন জানিয়েছিলেন, ‘আমি বলছি বলে নই, আপনারা ত্রাণশিবিরে কর্মরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁরা সব বয়সের মানুষের মধ্যে ট্রমা লক্ষ করছেন। ট্রমায় থাকলে তারা দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। কোনো ওষুধ কাজে আসবে না।’ তাজউদ্দীনের মধ্যে একটা সম্মোহনী শক্তি ছিল। কোনো বাজেট লাইন না থাকলেও জুলিয়ান রাজি হয়ে যান। কেনা হয় নানা বাদ্যযন্ত্র। বিতরণ করা হয় শিবিরে শিবিরে। গড়ে ওঠে শিল্পীদল।
কিন্তু হিসাব নিরীক্ষকদের কে মানাবে? তবলা, ঢোল, গিটার, হারমোনিয়াম কেনা হয়েছিল স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে। ওষুধ না কিনে গানবাজনার যন্ত্রপাতি কেনা ছিল তাদের কাছে গর্হিত অপরাধ। এবার শিবিরের চিকিৎসকেরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা লিখিতভাবে জানান, এসব সামগ্রী ব্যবহারের পর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, কত গভীর চিন্তার চর্চা থাকলে একজন আগাপাছতলা রাজনীতিবিদ এমনভাবে ভাবতে পারেন। শেখাতে পারেন পেশাদার ত্রাণকর্মীদের।
দেশ শত্রুমুক্ত হলে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে জুলিয়ান ঢাকায় এসে তাজউদ্দীনের সঙ্গে দেখা করেন। তাজউদ্দীনের দপ্তরে তখন ত্রাণের দায়িত্বে থাকা কামারুজ্জামানের সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়। তাঁরা তাঁকে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধুর কাছে। জুলিয়ানের কাছে সেটাও এক স্মরণীয় মুহূর্ত। সেটা অন্য গল্প। অন্য একদিন সে ঝাঁপি খোলা যাবে। তাজউদ্দীন জন্মশতবর্ষ যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপিত হোক।
● গওহার নঈম ওয়ারা গবেষক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অর্জন গ্রন্থের প্রণেতা।
[email protected]