তৃতীয় দিন: ৩০ সফর, ২৭ মে, বুধবার
মহানবী (সা.)-র শারীরিক অসুস্থতা স্পষ্ট ওয়ে হঠে। প্রাথমিক আলামত এভাবে প্রকাশ পায় যে মধ্যরাতে নবীজি (সা.) তাঁর সেবাদাস আবু মুওয়াইবাহকে মদিনার কবরস্থানে নিয়ে যেতে বলেন, যার নাম বাকি আল-গারকাদ। সেখানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন সমাহিতদের ক্ষমা করেন। পরে ঘরে ফিরে আসেন। ভোর হলে মৃত্যুরোগের তীব্রতা দেখা দেয়। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ২/৬৪২; সিরাতে ইবনে কাসির, ৪/৪৪৩)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি বাকি থেকে ফিরে এসে দেখেন, আমি অসুস্থ, মাথার ব্যথায় কাতরাচ্ছি। বললাম, আমার মাথায় কী যে যন্ত্রণা। তিনি বললেন, না, আমার মাথায় অনেক বেশি যন্ত্রণা। আয়েশা, আমার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ, ১,৪৬৫)
তাঁর জ্বর বেড়ে যায়, তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ওদিকে মুসলিম সেনাদল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে ওসামা ইবনে জায়েদের নেতৃত্বে।
চতুর্থ দিন: ১ রবিউল আউয়াল, ২৮ মে, বৃহস্পতিবার
নবীজি (সা.) ওসামা ইবনে জায়েদকে ডাকেন এবং নিজ হাতে তার পতাকা বাঁধেন। তারপর বলেন, ‘ওসামা, আল্লাহর নামে যাত্রা শুরু করো, আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো। যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে। প্রতারণা কোরো না, শিশু বা নারীকে হত্যা কোরো না। শত্রুর সাক্ষাতের অপেক্ষা কোরো না; জানো তো না যে, তাদের ফাঁদে পড়ছ কি না তোমরা। প্রার্থনা করো, আল্লাহ, শত্রুদের থেকে আমাদের রক্ষা করুন, তাদের শক্তি আমাদের থেকে দূরে রাখুন। যদি তারাই তোমাদের মুখোমুখি হয় এবং তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে ধীর–স্থিরতা বজায় রাখো এবং অন্তর্বিবাদ কোরো না, যাতে তোমরা ব্যর্থ না হও এবং তোমাদের শক্তি ক্ষয় না হয়। প্রার্থনা করো, আল্লাহ, তোমার দাস আমরা এবং তারাও। আমাদের মাথা এবং তাদের মাথা—সবই তোমার হাতে। তুমিই তাদের পরাজিত করতে পারো। জানো তো, তরবারির ঝলকের নিচেই বেহেশত। ওসামার হাতে পতাকা দিয়ে বলেন, আল্লাহর নামে যাত্রা শুরু করো এবং উবনার অধিবাসীদের ওপর আক্রমণ চালাও।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৮৫৭; সুনান আবু দাউদ, হাদিস ২৬১৬)
নবীজি (সা.) ওসামাকে বলেন জুরফ এলাকায় শিবির স্থাপন করতে। এখনো যারা তৈরি হতে পারেনি, যেন সেখানে গিয়ে তাঁরা বাহিনীতে যোগদান করতে পারেন এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সেনাদল গঠন হয়। ওসামা পতাকা নিয়ে বেরিয়ে যান। তিনি পতাকাটি বুরাইদা ইবনে হাসিব আসলামিকে দেন, তিনি তা ওসামার বাড়িতে নিয়ে যান। (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস ৪৪৬৮; সিরাতে ইবনে কাসির, ৪/৪৪১)
উল্লেখ্য, ওয়াকিদি ও ইবনে সাদ দুজনেরই মত হলো, নবীজি (সা.) অসুস্থ হয়েছেন ২৯ সফর বুধবার এবং ৩০ সফর বৃহস্পতিবার ওসামা ইবনে জায়েদকে পতাকা বেঁধে দেন। কিন্তু ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার ধরলে ৩০ সফর হয় বুধবার, বৃহস্পতিবার ১ রবিউল আউয়াল।
আমাদের ধারণা, নবীজির (সা.) অসুস্থতা যেমন মঙ্গলবার (২৯ সফর) দিবাগত রাতে দেখা দিয়েছে, তেমনি পতাকা বাঁধার ঘটনাও হয়েছে বুধবার সন্ধ্যার পরে, যাকে বৃহস্পতিবার ধরা হয়েছে। যেহেতু হিজরি হিসেবে সূর্যাস্তের পরে নতুন দিন হিসাব করা হয়, ফলে পরবর্তীকালের হিসাবে তারিখ ও বার আগপিছ হতে পারে।