ব্যাংকের শেয়ারধারী হলেও আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন ২২০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। এ নিয়ে মামলা করার পরেই হামলার ঘটনা ঘটেছিল। দখল করে তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর একই দিনে জাফর আহমেদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, হামলাকারীর দলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র জাভেদ (পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমি প্রতিমন্ত্রী, যাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে) ছাড়াও ছিলেন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের কাদেরীয়া বাহিনীর কাদের, নাসিরাবাদের ছিড়া আকবর ও বাঁশখালীর খুরশীদ।
পুরোনো আরেকটি ঘটনার কথা এখানে বলা প্রয়োজন। ১৯৯৩ সালের ৮ এপ্রিল ইউসিবিএলেরই পরিচালক হুমায়ুন জহিরকে ধানমন্ডির বাসায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। বলা হয় ব্যাংক পরিচালকদের মধ্যে বিরোধের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় আখতারুজ্জামান বাবুকে দায়ী করে মামলা ও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন পেয়ে পরে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান, ফিরে আসেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে। তারপরই ব্যাংক দখলের এই ঘটনা।
জাফর আহমেদ চৌধুরী ও আখতারুজ্জামান বাবু—দুজনই দলের সদস্য হওয়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছিল সে সময়কার আওয়ামী লীগ সরকার। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া পরদিন মন্তব্য করেছিলেন, ‘ইউসিবিএল ঘটনার দুটি দিক আছে। একটি অর্থনৈতিক, যা বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। অন্যটি রাজনৈতিক, যা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।’ ফলে কাকে রেখে কাকে বাদ দেওয়া হবে, এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক উভয় পক্ষকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়, বোর্ডের কার্যক্রম বন্ধ করে। পরে আদালতের আদেশে চেয়ারম্যান পদ ফিরে পেয়েছিলেন জাফর আহমেদ চোধুরী। নানা অনিয়মের কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁকেও চলে যেতে হয় ব্যাংক ছেড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আখতারুজ্জামান বাবু আবার ইউসিবিএলের চেয়ারম্যান হন। সেই থেকে এই ব্যাংক তাঁর পরিবারের দখলেই আছে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় চরিত্র ‘বাবু’ কী কী খেয়েছে জানি না, তবে ব্যাংক যে ‘খেয়েছিল’ তা পরিষ্কার।