13.8 C
New York

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি, ক্ষমতার নেক্সাস ও যৌন নিপীড়ন

Published:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মির ভাষ্যে এর ব্যাখ্যা মেলে। তাঁর মতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমান ছাত্র ও প্রশাসনের একটা অংশের একটি শক্তিশালী নেক্সাস তৈরি হয়েছে। তাঁরা মনে করতে শুরু করেন যেকোনো ঘটনা ঘটিয়েই পার পাওয়া সম্ভব। এই সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকছে।

তার কারণ হলো, ক্ষমতাসীন বলয়ের রাজনৈতিক বলয়ের যে ছাত্র, তাঁদের এখন উপাচার্য এবং অন্যান্য প্রশাসনিক পদ নিয়োগের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক ভূমিকা পালন করার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, সেখানে এই চক্র শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে প্রশাসনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন, তাঁরা এই শক্তিকে ক্রমাগত শেল্টার দিয়ে যান। (ক্যাম্পাসকে অবাধ অপরাধের জায়গা বানাল কারা, প্রথম আলো, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)

সম্প্রতিকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যৌন হয়রানির ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ক্ষমতার এই নেক্সাসের সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির বা যৌন নিপীড়ন নিয়ে বাংলাদেশে কোনো গবেষণা নেই বললেই চলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীমের করা একটা গবেষণায় উচ্চশিক্ষায় যৌন হয়রানির একটা ধারণা পাওয়া যায়।

স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ: আ স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি শিরোনামে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে—নারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষক, সহপাঠী কিংবা বাসে বড় ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। কিন্তু ৯০ শতাংশের মতো ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগই করেন না। তাঁরা অভিযোগ করতে চান না, তার বড় কারণ পরিবার তাঁদের নিষেধ করে। মেয়েরা দিনের পর দিন এ ধরনের যৌন হয়রানি সহ্য করে যান। যখন একবারে অসহনীয় পর্যায়ে আসেন, তখন হয়তো তাঁরা বিভাগের শিক্ষকের কাছে, বিভাগের সভাপতির কাছে অভিযোগ জানান।

গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি যে আছে, সেটা ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না। একজন শিক্ষার্থীও বলতে পারেননি প্রতিরোধ সেলের প্রধানের নাম কী, তাঁর কার্যালয়টি কোথায়। আর অভিযোগ যাঁরা করেন, সে ক্ষেত্রেও শাস্তির নজির নেই। ২০১০-২৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ পেয়েছে ৩৪ টি। এর মধ্যে ২৭ টির রিপোর্ট তদন্ত কমিটি জমা দিয়েছে। কিন্তু শাস্তির নজির হাতে গোনা কয়েকটি ঘটনায়। এ সব ক্ষেত্রেও বিভিন্ন মেয়াদে ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করার মতো শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বেতন, ভাতা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সবই পাচ্ছেন। কিন্তু একাডেমিক কাজ তাঁকে করতে হচ্ছে না।

প্রশ্ন হলো, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেটাকে শাস্তি মনে করছে, সেটা কি শাস্তি, নাকি পুরস্কার?

Related articles

Recent articles

spot_img