নওমী বলেন, ‘বাবা-মা যদি সম্পর্কটা স্বাভাবিক রেখে আমাকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতেন, তাহলে হয়তো আমাকে এমন আতঙ্কের জীবন কাটাতে হতো না।’
কোনো বয়সে মা–বাবার বিচ্ছেদ হলে তা সন্তানের জীবনে তেমন প্রভাব রাখে না। সে বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো হেলথ সায়েন্স সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্কট ক্যারল বলেন, সন্তান যখন একদম শিশু বয়সে থাকে, তখন মা–বাবার বিচ্ছেদ হলে তার ভেতর ট্র্রমা থাকে না। সে ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে দুই বছরের নিচে। তিনি বলেন, কোনো কোনো শিশুর দুই বছর বয়সের স্মৃতিও থেকে যায়। ফলে সে তার জীবনের এই পার্থক্যটি ধরতে পারে।
বিচ্ছেদের পর যেকোনো একজন অভিভাবক যদি শিশুর জীবন থেকে সরে যান বা যোগাযোগের বাইরে চলে যান, তাহলে তা ওই শিশুর জন্য ভীষণ কষ্টের হয়। এ ধরনের শিশুরা বিষণ্নতায় ভোগে বলেও জানান তিনি। এই বিশেষজ্ঞের মতে, বয়ঃসন্ধিকালের পর সাধারণত সন্তানেরা মা–বাবার বিচ্ছেদের বিষয়টি তুলনামূলক সহজে মেনে নিতে বা সমস্যাটি বুঝতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, তারাই বরং বিষয়টি পরিবারের অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে আগে মেনে নেয়।
এর সঙ্গে একমত রাবেয়া নাসরিনও। মফস্সল শহরে থাকা এই নারী জানালেন, ছেলের জন্মের কিছুদিন পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হচ্ছিল। এর দুই বছরের মধ্যেই বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় ছেলেকে একাই বড় করেছেন। বাবা বা দাদাবাড়ির সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক অনেকটাই আনুষ্ঠানিক। ঈদ বা ওই পরিবারে কারও বিয়ে-জন্মদিনে সে দাওয়াত পায়। অন্য সব দাওয়াতের মতোই যায়, অংশ নিয়ে চলে আসে। খুব একটা মানসিক বন্ধন সে অনুভব করে না।
রাবেয়া বলেন, বাবার সঙ্গে ভালো করে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ফলে ছেলে পরিবারের ভাঙন কী জানে না; পরিবার কেমন ছিল, সেটাই জানে না।