17.2 C
New York

নির্বাচনের পর রাজনীতি কোন পথে

Published:

গত এক যুগের রাজনৈতিক তৎপরতা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে কয়েকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভিন্নমত প্রবলভাবে দমন করা হয়েছে, সরকারি নীতির সমালোচনামূলক কোনো রকম গণজমায়েত হতে দেওয়া হয়নি। সর্বোপরি বিরোধী দলগুলোর ওপরে চলেছে নিপীড়ন, জেল-জরিমানা। গত অক্টোবর থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশকে জেলে ঢোকানো হয়েছে, অদ্ভুত সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বারো শতাধিক নেতাকে। আর এসব দমন–পীড়নের ক্ষেত্রে সরকারি দল, তাদের অঙ্গসংগঠন, মিডিয়ার একটি অংশ, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন ও আদালত একযোগে কাজ করেছেন। সরকার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের পার্থক্য একেবারে ঘুচিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অংশীদারত্বমূলক ও অবাধ নির্বাচনের পরিস্থিতি আগে থেকেই ছিল অনুপস্থিত।

তফসিল ঘোষণার পরে সরকারি দলের প্রার্থী ও সমমনা নামসর্বস্ব দলগুলোকে যেভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, আসন ভাগাভাগি করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। এ ক্ষেত্রে এমন এক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে যে ভোটাররা ভোট দিক বা না দিক সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হবেই হবে। উপরন্তু যে বা যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে আসুন না কেন, তাঁরা সরকারেরই পছন্দের লোক—নৌকার প্রার্থী, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ‘ডামি’ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সরকারেরই পছন্দের তথাকথিত বিরোধী প্রার্থীরা সংসদ গঠন করবেন। সব রসুনের কোয়া গিয়ে বাঁধা পড়েছে এক হাতে! এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার অঙ্গীকার অযথা বাগাড়ম্বর। কারণ, ফলাফল তো আগেই আমরা জেনে ফেলেছি। কেবল, ভোট গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা ও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণার কাজটি বাকি আছে! ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে আমরা সংসদে ‘পুতুল’ বিরোধী দল পেয়েছিলাম। কিন্তু এবারের কৌশল এমনই এক পরিণতি ডেকে আনবে যে সংসদে আদতে বিরোধী দল বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই থাকবে না।

জনগণের ম্যান্ডেটের অনুপস্থিতির কারণে নিরঙ্কুশ আধিপত্যের নতুন পর্ব শুরু হবে নির্বাচনের পরে। প্রার্থীদের প্রচারণায় হুমকি–ধমকির প্রবল ব্যবহার তা স্পষ্ট করেও তুলেছে। দেশে–বিদেশে এ সরকার নৈতিক বৈধতা পাবে না। তাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হবে আরও বেশি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, যা দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে বলেই আশঙ্কা। কারণ, জন–সন্তোষ মোকাবিলার আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিমূলক চেতনা। স্বাধীনতার অর্ধশতক পরে সেই প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে আরও সুদূর অন্ধকারে পাঠিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন এবার সম্পন্ন হয়েছে!

Related articles

Recent articles

spot_img