নারী–পুরুষ যে কারও হতে পারে এ রোগ। তবে তুলনামূলকভাবে মেয়েদেরই বেশি হয়। সাধারণত ১২-১৩ বছর বয়সে এ রোগের সূত্রপাত ঘটে। তবে, যেকোনো বয়সেই এটা হতে পারে। এ রোগের প্রকোপ একই পরিবারের বিভিন্ন মানুষের ভেতর দেখা যায়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেমন সেরোটোনিন ও ডোপামিন সমস্যার কারণে এটি হয় বলে ধারণা করা হয়। চোখের পাপড়ি, চোখের ভ্রু, যৌনকেশ, দাড়ি, গোঁফ, বাহু, পা, বুকের চুল, পেটের চুল তোলেন, এ রকম রোগীও দেখা যায়। তাঁদের ভেতর একটি দল আছে, যারা আবার তুলে ফেলা চুল খেয়ে ফেলে। এই চুল পেটের ভেতরে আটকে গিয়ে পেটের নাড়ি পর্যন্ত ব্লক করে দিতে পারে। এতে পেটের ভেতরের টিউব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অনেকের চুল তোলার পর কামড়ানোর অভ্যাস আছে, তাতেও ক্ষতি। এতে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। পেট খারাপ হতে পারে। চিকিৎসা ও করণীয় আক্রান্ত ব্যক্তির যেহেতু এটি ছাড়া আর কোনো সমস্যা থাকে না এবং অন্য সব স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তাই কিছুতেই তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। এমনকি চিকিৎসকের সামনে সমস্যাটা প্রকাশও করতে চান না। অনেকে ভাবেন, এসবের আবার চিকিৎসা কী! তাই পরিবারের স্বজন বা রোগীর মধ্যে এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো দরকার। এটি যে এক ধরনের মানসিক রোগ, সেটি রোগী ও তাঁর পরিবারকে বোঝানো দরকার। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি অনেকটা ওসিডির মতোই হয়ে থাকে এই রোগের চিকিৎসা।
এই অসুখে সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর গ্রুপের ওষুধ ও কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি—এ দুটি চিকিৎসা কার্যকর। অনেকে এই রোগকে চর্মরোগ মনে করেন। মনে রাখতে হবে, নিজে নিজে চুল তুলে ফেলা আর এমনিতে চুল পড়া এক বিষয় না। ফলে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। আক্রান্ত মানুষটি তাঁর তুলে ফেলা চুলের অংশটুকু ঢাকার জন্য সব সময় তটস্থ থাকেন।
পরচুলা লাগানো কিংবা চুল আঁচড়ানোর স্টাইলটাই এমন করে করার চেষ্টা করেন, যাতে বাইরে থেকে বোঝা না যায়। অনেকে সামাজিক অনুষ্ঠান বা জনসমাগমস্থলে যেতে বিব্রতবোধ করেন। নিজেকে বা নিজের সমস্যাটিকে লুকিয়ে রাখার সব চেষ্টা তাঁরা করে থাকেন। অনেক সময় এ রোগের পাশাপাশি অন্যান্য মানসিক রোগও সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। তাই এ রকম সমস্যা হলে অবশ্যই দেরি না করে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।