14.6 C
New York

নতুন শিক্ষাক্রমে কি সত্যিই ‘পরীক্ষাপদ্ধতি’ থাকছে না

Published:

দ্বিতীয়ত, আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের প্রকৃতি, প্রয়োজনীয়তা এবং সক্ষমতায় বড় প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে শুধু পুঁথিগত জ্ঞান দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পাল্লা দিতে এখন আরও বেশি বিচক্ষণ, বিশ্লেষণধর্মী এবং সৃজনশীলতার মতো দক্ষতার অধিকারী হতে হবে। এ কারণে, দেশের জনগোষ্ঠীকে আসন্ন কর্মক্ষেত্রের জন্য সক্ষম করার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাতেও একটি বড় পরিবর্তন আবশ্যক। নতুন শিক্ষাক্রম সেই আবশ্যকতা নিশ্চিতকরণের একটি প্রয়াস।
তৃতীয়ত, এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে। এখন শিক্ষার্থীরা শিখবে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে, হাতে-কলমে কাজ করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে, শুধু মুখস্থ করে খাতায় লেখার মাধ্যমে নয়। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়কে তারা নিজেদের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সব রকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে শিখবে। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে গিয়ে রাষ্ট্র তথা সমাজ তার প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষ নাগরিক পাবে।
প্রণীত প্রতিটি বইয়ের সঙ্গে জাতিধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী যেন সমানভাবে একাত্ম হতে পারে, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বইগুলোতে বিভিন্ন কার্যক্রম এমনভাবে দেওয়া হয়েছে, যেন প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি কৌতূহলী এবং আনন্দদায়ক শিখন-শেখানো পরিবেশের মাধ্যমে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমন গণিত বিষয়ে জ্যামিতিতে ক্ষেত্রফলের সূত্র মুখস্থ না করিয়ে সরাসরি হাতে-কলমে শিক্ষার্থীদের চারপাশের পরিচিত বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করিয়ে ক্ষেত্রফলের ধারণা শেখানো হচ্ছে। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা স্প্রেডশিট কাকে বলে, কত প্রকার ইত্যাদি মুখস্থ না করে নির্দিষ্ট সমস্যার আলোকে চারপাশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে স্প্রেডশিট তৈরি করছে। ফলে তাদের অর্জিত জ্ঞান দক্ষতায় রূপান্তরিত হচ্ছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তা হলো নতুন শিক্ষাক্রমে ‘পরীক্ষাপদ্ধতি’ থাকছে না। আদতে পরীক্ষাপদ্ধতির ধরনে একটি পরিবর্তন এসেছে; তবে ‘পরীক্ষাপদ্ধতি’ থাকছে না—এমনটি অবশ্যই নয়। এত দিন মূল্যায়নপদ্ধতি ছিল মুখস্থনির্ভর এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে খাতায় লিখে তা সম্পন্ন করতে হতো। কয়েক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষার পরিবর্তে এখন একাধিক দিনের আরও নির্ভরযোগ্য, উন্নতমানের এবং শিক্ষার্থীবান্ধব মূল্যায়নপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন লিখিত কাজও রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদা এবং সক্ষমতার বিবেচনায় নতুন এ মূল্যায়নপদ্ধতি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। প্রত্যেক শিক্ষার্থী সত্যিকার অর্থে কতখানি শিখেছে, তা যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে তাকে সহায়তা করাই তো মূল্যায়নের উদ্দেশ্য। এই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিখনকে, তাদের অর্জনকে নয়।

Related articles

Recent articles

spot_img