25.1 C
New York

‘তুমি সেই বৃষ্টিভেজা কৃষকের বেদনার কথা বলো…’

Published:

শ্রমিকের ভাগ্য ফিরেছে কি ফেরেনি, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সমাজে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না। শ্রমের মর্যাদা একটা মনোজাগতিক বিষয় এবং সামন্তীয় দৃষ্টিভঙ্গিই শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

রবীন্দ্রনাথ জমিদারপুত্র ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে রবীন্দ্রনাথ একসময় উপলব্ধি করলেন, যাঁদের শ্রমে এই জগৎ সংসার চলছে, তাঁদের জন্য কিছুই লেখা হয়নি, তাঁর সাহিত্যে সেই শ্রমজীবী মানুষেরই কোনো স্থান হয়নি। এ জন্য তিনি গভীর বেদনা অনুভব করলেন। ১৯৪১ সালে ‘জন্মদিনে’ কবিতায় তিনি লিখলেন:

‘চাষি ক্ষেতে চালাইছে হাল,

তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল’

একই কবিতায় তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন এবং এমন একজন কবির আবির্ভাব কামনা করেন, যিনি তাঁর কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের জীবনগাথা রচনা করবেন। তিনি লিখেছেন:

‘আমার কবিতা, জানি আমি,

গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সর্বত্রগামী

যে আছে মাটির কাছাকাছি

সে কবির-বাণী-লাগি কান পেতে আছি’

যদিও রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সাল থেকেই কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্য ফেরানোর জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। বাংলা ১৩০০ সালে লেখা ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায়ও তিনি ‘দরিদ্রের ভগবানের’ মুক্তি আবাহন করেন।

অন্যদিকে কাজী নজরুল ইসলামের জীবন দর্শনই ছিল সাম্যে স্থিত। পরিভাষার অর্থেই তিনি সাম্যবাদী ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্‌ফর আহমদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। প্রথম জীবনেই তিনি লিখেছেন, ‘কুলি বলে বাবু সা’ব তাঁরে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!/…এমন ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’

এর পরে প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কবি অনেক কবিতা লিখেছেন শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে উপজীব্য করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রাগৈতিহাসিক গল্পে এক ভিখারির জীবনের করুণ কাহিনি বর্ণনা করে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। বাঙালি সমাজে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, নিম্নবর্ণের মানুষের প্রতি উচ্চবর্ণের মানুষের অবজ্ঞা দূর হয়নি।

Related articles

Recent articles

spot_img