15.3 C
New York

জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্য যেভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করছে

Published:

ব্যবসা ও রাজনীতির এই যোগসূত্রের কারণেই ব্যাংকিং, পোশাকশিল্প বা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আইন, নীতিমালা বা প্রণোদনা কী হবে, তা ব্যবসায়ীরাই ঠিক করছেন। উদাহরণস্বরূপ নির্বাচনের আগে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনীর কথা বলা যেতে পারে। জাতীয় সংসদে যখন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ প্রথম উত্থাপন করা হয়, সেখানে পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ছিল না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও এ ব্যাপারে সংশোধনী দেয়নি। কিন্তু বিলটি সংসদে পাস করার আগে সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব আক্ষরিকভাবেই কোনো আলোচনা ছাড়াই জাতীয় সংসদে পাস হয়ে যায়।

প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে, পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) যে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটাই প্রায় হুবহু সংসদে সংশোধনী আকারে জমা দিয়েছিলেন সরকারি দলের ওই সংসদ সদস্য। (ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ‘আজীবন’ করার প্রস্তাব, প্রথম আলো, ২২ জুন ২০২৩)

রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের যোগসূত্রের কারণেই সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এই আইনের ছত্রচ্ছায়ায় বিনা দরপত্রে একের পর এক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ ও জ্বালানি আমদানির বোঝা বহন করতে হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে।

একই কারণে দেশের অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে পোশাকশিল্পের মালিকেরা সরকারের কাছ থেকে বেশি সুযোগ–সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে করছাড়, নগদ সহায়তা, মূসক অব্যাহতি, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি। (তৈরি পোশাক খাত ব্যবসায় এগিয়ে, মজুরিতে পিছিয়ে, প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০২৩)

রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের এই ‘যোগসূত্র’ যেমনি ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’, তেমনি তা সরকারের জবাবদিহিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।

কল্লোল মোস্তফা, লেখক ও গবেষক

Related articles

Recent articles

spot_img