14.6 C
New York

গবেষণাগারের রাসায়নিক বর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ

Published:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করা বিভাগগুলোর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য অন্তত ২১টি গবেষণাগার রয়েছে। এসব গবেষণাগারে নানা অর্গানিক এবং নন-অর্গানিক কেমিক্যাল ব্যবহার করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গবেষণাগারগুলোতে রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশণ ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবহারের পর এসব কেমিক্যাল ফেলে দেওয়া হচ্ছে গবেষণাগার সংলগ্ন ড্রেনে। যা ড্রেনেজ টানেলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও পুকুরের পানিতে মিশছে। এছাড়া কিছু বর্জ্য নির্গত হয়ে সরাসরি মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেমিক্যাল সম্পৃক্ত গবেষণায় শিক্ষকদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৯টি বিশেষ থিসিস গবেষণাগার রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ বিভাগগুলোতে অবস্থিত মোট ১২টি একাডেমিক গবেষণাগারে রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেন শিক্ষার্থীরা। বছরে এক কোটির অধিক মূল্যের প্রায় ৭০ রকমের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, হাইডোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডসহ অর্ধশতাধিক শক্তিশালী কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গবেষণাগারে ব্যবহৃত শক্তিশালী কেমিক্যালগুলোর বর্জ্য পরিকল্পিতভাবে নিষ্কাশন না হয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিশে গেলে উদ্ভিদ ও পরিবেশের উপর বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার শঙ্কা থাকে। স্বল্প মাত্রার কেমিক্যালও দীর্ঘ সময় ধরে পানি ও মাটিতে মিশলে একই রকম ক্ষতি হতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি রোধে সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে রাসায়নিক পদার্থের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার দাবি জানান তারা।

গবেষণাগারের রাসায়নিক বর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ

ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান হোসেন বলেন, আমদেরকে নানা টক্সিক কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয়। যার বর্জ্য পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি। এগুলো যতটাই সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার হোক না কেন, এর কার্যক্রম নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। আমাদের বর্জ্য আলাদাভাবে পড়ানো হলেও এর বাস্তবায়ন হয় না। ইটিপি (শোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে এসব ক্ষতি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব।

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্জ্য পরিশোধন করা না হলে তা সরাসরি প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলবে। বর্জ্যগুলো পানিতে গিয়ে কীট-পতঙ্গ ও ব্যাঙের দেহে প্রবেশ করবে। যা মাছ ও পশুপাখি হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করবে। এছাড়া লেড ও ক্যাডমিয়ামের মতো বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানিতে গিয়ে পৌঁছানো সম্ভাবনা থাকে।

তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বে এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে আন্ডারগ্রাউন্ড সিস্টেম করা হয়। এতে সকল বর্জ্য সেখানে একাধিক পাত্রে জমা করা হয়। পরে নির্দিষ্ট সময় পরপর ন্যাশনাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে সেসকল বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণাগারের রাসায়নিক বর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ

জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন, কেমিক্যাল বর্জ্যগুলো মাটি ও পানিতে মিশে পিএইচ মান ও অক্সিজেন মাত্রার তারতম্য ঘটায়। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জীবগুলোর ক্ষতিসাধন হয়। এতে মাটির উর্বরতা কমে এবং কৃষিকাজে ঠিকমতো ফলন পাওয়া যায় না। এজন্য ইটিপি প্ল্যান্ট করা যেতে পারে। তবে প্রথমত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের সমন্বয় দরকার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরীফ উদ্দীন বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। বিভাগগুলো থেকে যদি কোনো প্রস্তাবনা আসে তাহলে বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও যাচাই করে কাজ করা হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অনুষদের যারা আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন। কীভাবে সমাধান করা যায় তা তাদের মাধ্যমেই প্রস্তাব আসতে হবে। তখন আমরা পদক্ষেপ নিতে পারবো। এরপরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Related articles

Recent articles

spot_img