21.4 C
New York

কোরবানির নিয়ত করার পর পশু বিক্রি করার বিধান

Published:

কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে নির্গত। অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবাই করাই হলো কোরবানি।

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ اِنَّ شَانِئَکَ هُوَ الۡاَبۡتَرُ

নিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ। (সুরা কাওসার: ১-৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَالۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰهَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ لَکُمۡ فِیۡهَا خَیۡرٌ فَاذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلَیۡهَا صَوَآفَّ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُنُوۡبُهَا فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰهَا لَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ: ৩৬, ৩৭)

যারা জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা সোনা বা এর সমমূল্যের মালিক হয়, হানাফি মাজহাব অনুযায়ী তাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। অন্যান্য মাজহাবে কোরবানি ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নতে মুআক্কাদা।

যদি কারো মালিকানায় পালিত পশু থাকে আর সে ওই পশুটিকে কোরবানি করার নিয়ত করে অথবা কেউ কোনো পশু কোরবানির নিয়ত ছাড়া ক্রয় করার পর কোরবানির নিয়ত করে, তাহলে সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক অর্থাৎ কোরবানি করার সামর্থ্যের অধিকারী হোক বা না হোক, ওই পশুটিই কোরবানি করা তার জন্য জরুরি নয়। সে ওই পশুর পরিবর্তে অন্য কোনো পশু কোরবানি করতে পারে, ওই পশুটি বিক্রিও করে দিতে পারে।

কিন্তু কোনো পশু যদি কোরবানির নিয়তেই কেনা হয়, তার হুকুম আলাদা। কোরবানি ওয়াজিব এমন কোনো ব্যক্তি যদি কোরবানি করার নিয়তে কোনো পশু কেনে, পরে সেটি পালার জন্য রেখে দিতে চায়, পরের বছর কোরবানি দেবার নিয়ত করে বা বিক্রি করে দিতে চায়, তা তার জন্য জায়েজ।

কিন্তু তার ওপর ওই পশুর সমমানের বা ওই পশুর চেয়ে উত্তম কোনো পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। তাই দ্বিতীয় পশু কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন প্রথম পশুটির চেয়ে কমমূল্যের না হয়। দ্বিতীয় পশুটি যদি প্রথমে কোরবানির নিয়তে কেনা পশুর চেয়ে কমমূল্যের হয়, তাহলে প্রথমটির চেয়ে যত টাকা কম, তত টাকা দান করে দিতে হবে।

আর কোরবানি ওয়াজিব ছিল না এমন ব্যক্তি কোরবানির করার নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করলে তার জন্য ওই পশুটি কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই তার জন্য তা পালার জন্য রেখে দেওয়া বা বিক্রি করা জায়েজ নয়। যে বছরের কোরবানির জন্য কেনা হয়েছে, ওই বছর কোরবানি করা না হলে, কোরবানির দিনগুলো চলে গেলে ওই পশুটি দান করে দেয়া আবশ্যক।

ওএফইফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

Related articles

Recent articles

spot_img