আফসোস ছিল খোদ কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরও।ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত এবং শিল্পীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি লিখেছেন এ সংগীতবোদ্ধা। কুদ্রত্ রঙ্গিবিরঙ্গী বইয়ের কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আগ্রা ঘরানা, পাতিয়ালা, গোয়ালিওর, জয়পুর ঘরানার ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন আলোচনার জন্য। ভাস্কর বুয়া, দিলীপচন্দ্র বেদী, ওঙ্কারনাথ, এনায়েত খাঁ, রাজাভইয়া পুছওয়ালে, ওস্তাদ আমির খাঁ সম্পর্কে বলেছেন নানা বিচিত্র গল্প। এর মধ্যে ‘সহসওয়ান: গোয়ালিওর’ নিয়ে লিখতে গিয়ে বলছেন, ‘রাশিদ খাঁর কাছে অনেক আশা ছিল, কিন্তু আধাখ্যাঁচড়া তালিমের মাঝখানে সে খাঁ সাহেবের নাতনির পরিবর্তে একটি টুকটুকে বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে গুরুকুল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। খাঁ সাহেব একে ক্ষমা করলে ভালো করতেন, কারণ এঁর গলা ও প্রতিভা অসাধারণ। এবং বয়সও বেশি নয়। এ সহসওয়ানের নাম রাখত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে।বাংলা ১৪০২ সালে প্রথম প্রকাশিত কুদ্রত্ রঙ্গিবিরঙ্গীর সময় কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানতেন না রশিদ খান আমাদের মতো কম বোঝা শ্রোতাদের কাছে রামপুর সহস্ওয়ান রাগের পরিচয় তুলে দিতে পারুক না পারুক, তিনি কিছু সুর তুলে দিয়েছেন। যখন ‘আয়ো গে যাব তুম সাজনা, আঙনা ফুল খিলে’র সুরে টান দেন আমরা বুঁদ হয়ে অনুভব করি প্রিয়জন আসছে আমার কাছে।তাঁর স্বীকৃতির একটি অনন্য উদাহরণ ভীমসেন যোশি। গতকাল রশিদ খানের প্রয়াণের পর তাঁকে নিয়ে লাইভে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন তাঁর পরিচিত প্রতিবেশী সংগীত বোদ্ধা সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে একজন। একটা ছোট্ট গল্প বললেন তিনি। অনেক দিন রাগে রশিদ তখনো ছোট। একবার ভীম সেন যোশির কনসার্ট হচ্ছে। তাঁকে কাছ থেকে দেখবেন বলে ছোট্ট রশিদ মঞ্চের কাছে চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন। আয়োজকেরা তুলে দিয়েছিলেন রশিদকে।অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে আসতে রশিদ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজ যাঁরা তাঁকে তুলে দিল একদিন যেন তাঁরা তাঁকে গাইতে ডাকে এমনভাবে গান শিখবেন তিনি। পূর্ণ হয়েছিল সে বাসনা।