15.1 C
New York

কমিকসও হতে পারে পড়াশোনার বিষয়

Published:

ক্লাসে সহপাঠীদের সঙ্গে মেহেদী হকের সেলফি

মেহেদী হক: দুইভাবে হবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রথমত, মার্কিন কমিকস কমিউনিটি আমাদের কাজ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। সেটা জানানোর একটা পথ এখন খুলে গেছে বলে মনে করি। আমাদের ফ্যাকাল্টি ডিন জাস্টিন হল ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কোনো কমিকস বা কার্টুনের একাডেমিক ডিপার্টমেন্ট খুললে সেখানে একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম করা যেতে পারে বলে আলাপ করেছেন। তাঁরা অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে আদান-প্রদানে সব সময়ই খুব আগ্রহী। বাংলাদেশের মৌলিক গল্পগুলো তাঁরা জানতে আগ্রহী। ফলে আমাদের দেশের কাজ অনূদিত হয়ে কমিকসের বিশ্ববাজারে যাওয়ার পথটাও এখন সুগম হবে। আর এই আদান-প্রদান শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে, এমন নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গা থেকেও এর মূল্য অনেক।
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে কমিকস, কার্টুন ইত্যাদির কোনো মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। আমার মূল লক্ষ্য মার্কিন কমিকসশিল্পের এই জ্ঞান যতটা সম্ভব আমাদের দেশে নিয়ে আসা। এ বিষয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে আমি তা কাজে লাগাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। আর সে সঙ্গে সরাসরি আমাদের কমিকসের কাজেও এর প্রভাব পড়বে। কারণ, প্রতিবছর ঢাকা কমিকস থেকে আমরা বেশ কটি কমিকস বই প্রকাশ করছি।
এখানে একটা ব্যাপার বলে নেওয়া জরুরি, আমরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ‘পপুলার’ ঘরানার সবকিছু সহজে দেখতে পাই; যেমন সুপারহিরো জনরা, সায়েন্স ফিকশন কমিকস ইত্যাদি। কিন্তু পড়াশোনা করতে এসে উপলব্ধি হলো, এর বাইরে কমিকসের এক বিশাল ভান্ডার আছে; যার তুলনায় সুপারহিরো বা অন্য যেসব দেখে বা পড়ে আমরা বড় হয়েছি, তা নিতান্তই সামান্য। সেসব বরং একেকটা সাব-জনরা। সেখানে বরং অনেক কাজ হচ্ছে সাহিত্য, স্মৃতিকথা, জীবনী নিয়ে; এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘গ্রাফিক মেডিসিন’ নামে একটা নতুন ধারাও চালু আছে। আমাদের দেশে এ রকম কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আমি যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছয়টি ঘটনার একটি অ্যান্থোলজি নিয়ে কাজ করছি। আমার শিক্ষকের নির্দেশনায় এতে ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ নিয়ে কাজ করেছি। আর কাজটি করার সময় উপলব্ধি করেছি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা সম্পর্কে বাইরের বিশ্ব কত কম জানে! আমার এই কাজের মেন্টর ছিলেন ভিয়াতনামিজ-মার্কিন গ্রাফিক নভেলিস্ট জিয়া বাও। তিনি অন্যতম বেস্ট সেলার ভিয়তনামেরিকা নামের গ্রাফিক নভেলের নভেলিস্ট। তিনি একদিন বললেন, ‘তোমাদের এই ভয়ানক গণহত্যার কথা আমরা কিন্তু সেভাবে জানিই না! এমনকি যাঁরা অনেক সচেতন, তাঁদের অনেকে জানে, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের একটা যুদ্ধ হয়েছিল! আমি মনে করি, তোমাদের এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর কাজ করা উচিত এবং অবশ্যই ইংরেজিতে।’ এ কথার ফলে আমি যেমন আমাদের ঢাকা কমিকস থেকে বেশ কিছু কাজ আন্তর্জাতিক পাঠককে মাথায় রেখে ইংরেজিতে করতে চলেছি।

Related articles

Recent articles

spot_img