18.5 C
New York

কফিশপের তিন ঘণ্টা কেন বাসায় বসে ছয় ঘণ্টা লেখার সমান

Published:

হাসনাত আবদুল হাই: আমার প্রাণশক্তির উৎস হলো, জীবন সম্পর্কে অপরিসীম কৌতূহল। কৌতূহলই আমাকে এ পর্যন্ত টেনে এনেছে। মানুষ সম্পর্কে আমার কৌতূহলের শেষ নেই। কৌতূহল থেকে আসে পর্যবেক্ষণ। গভীর পর্যবেক্ষণ শক্তি না থাকলে লেখক হওয়া যায় না।

একদিনের ঘটনা বলি শোনো। আমার মোবাইলটা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। ধানমন্ডিতে গ্লোরিয়া জিনস যেখানে, সেখানে স্যামসাং মোবাইলের একটা দোকান আছে। ভাবলাম, সেখানে যাই। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের শেষ মাথায় আই হসপিটালের ওখান থেকে ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম। তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হঠাৎ দেখি ফুটপাতে একটা লোক কাপড় বিছিয়ে কী যেন বিক্রি করছে। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা ভাই, এখানে গ্লোরিয়া জিনসটা কোথায়? সে বলল, এই তো সামনে। হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা যাওয়ার পর আমার মনে হলো, আরে, এ তো সাধারণ হকার নয়! সাধারণ হকারের পক্ষে গ্লোরিয়া জিনসের নাম জানার কথা না। আমি আবার ফিরে গেলাম তার কাছে। দেখলাম, লোকটার চোখেমুখে একধরনের লজ্জা, কুণ্ঠিত হয়ে আছে যেন। কাপড় বিছিয়ে যেসব জিনিস বিক্রি করছে—চিরুনি, টুথপেস্ট, আয়না—তাতে মনে হলো, সে মোটেও প্রফেশনাল হকার না। বুঝলাম, লোকটা মধ্যবিত্ত। খুব আর্থিক সংকটে পড়েছে। ঈদের আগে হাজার দুয়েক টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। আমার প্রয়োজন নেই, তবু তার কাছ থেকে এটা-সেটা কিনলাম। এই যে আমি লোকটার শ্রেণি চিনলাম, তার বর্তমান পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পারলাম, এটা সম্ভব হয়েছে আমার কৌতূহল আর পর্যবেক্ষণশক্তির কারণে। কৌতূহল ছাড়া কোনো মানুষ লেখক হতে পারে না, শিল্পী হতে পারে না।

হাসনাত আবদুল হাই
ছবি: সৈয়দ লতিফ হোসাইন

হাসনাত: অবশ্যই বাড়ে। আমার যত বয়স বেড়েছে, তত ম্যাচিউরড হয়েছি। পর্যবেক্ষণশক্তি বেড়েছে। প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। তবে শুধু প্রতিভা নিয়ে জন্মালেই হয় না। সেটির চর্চা করতে হয়। তো সেই চর্চা আমি করেছি। ছোটবেলা থেকে প্রচুর বই পড়েছি। লেখক হতে চাই—এটা আমার মধ্যে কখনোই ছিল না। লেখালেখি আমার একটা শখ ছিল। তারপর ধীরে ধীরে একসময় সেটা অবসেশন হয়ে গেল। বুঝলাম, লেখালেখিই আমার দ্বিতীয় সত্তা। আমি সরকারি চাকরি করতাম, সেটা আমার প্রথম সত্তা। আসলে আরও পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, সমান্তরাল সত্তা। দ্বিতীয় সত্তা বললে ভুল হবে। লেখালেখি ও চাকরি—দুটো সত্তা সমান্তরালেই ছিল।

আগেও লিখতাম, তবে ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হলো, তারপর আবার আমার লেখালেখি পূর্ণোদ্যমে শুরু হলো। আসলে বাংলাদেশ হওয়ার পরে আমার লেখকসত্তা বিকশিত হয়েছে। লেখক হিসেবে আমার যে নবজন্ম হলো, সেটা বাংলাদেশের জন্মের কারণেই। নতুন দেশ হওয়ার পর যে সৃষ্টির জোয়ার শুরু হয়েছিল, তা আমাকেও স্পর্শ করেছিল।

Related articles

Recent articles

spot_img