13.3 C
New York

এমন গুলশান লেক কি আমরা চেয়েছিলাম?

Published:

কাজটি সহজ নয়। বিপুল অর্থ এবং পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দরকার হবে এ জন্য। সমস্যা হচ্ছে, লেকের মালিক রাজউক, তাদের এসব ছোটখাটো বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়। সুয়ারেজ লাইনের মালিক ওয়াসা, যার এমডি তাকসিম খান কিছু না করেই সাতবার বিপুল বেতনে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি কেন এসব ঝামেলা করতে যাবেন। মেয়র সাহেব শুধু রাস্তা আর সারফেস ড্রেনের মালিক। তিনি যদি আন্তরিকও হন, কিছু করা তাঁর জন্য কঠিন। 

সমাধানের পথ একটাই। এ দেশে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে বা বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লাগে। মেয়র আতিক যদি তাঁর সম্মতি লাভ করতে সক্ষম হন, সাত দিনের মধ্যে রাজউক এক টাকা প্রতীকী মূল্যে লেকটি ডিএনসিসিকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে পারে, তাকসিম খানের সুবিধাদি বহাল রেখে তাঁকে পাশ কাটিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, আর এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তিও সম্ভব হতে পারে। চেষ্টা করে দেখুন না মেয়র সাহেব। 

যদি সফল হন, তাহলে আরও কয়েকটা জরুরি কাজের আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখি:

১. বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এই লেকের পাড়ে বসে বা দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করেন। গুলশানের দিকে লেকের পাড়ে কিছু গণশৌচাগার বানান, যাতে জনস্বাস্থ্যবিরোধী এই ন্যক্কারজনক দৃশ্য থেকে মুক্তি মেলে। 

২. লেকের দুই পাড় সংযোগকারী তিনটি রাস্তাতেই লম্বা, একটু উঁচু এবং খানিকটা সুদৃশ্য সেতু রাখুন প্রকল্পে, যাতে এটা প্রকৃতই একটি লেকে পরিণত হয়। দক্ষিণের সেতুটি লেকটিকে হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত করবে। আপনি স্বপ্ন দেখছেন নাগরিকেরা এখানে নৌভ্রমণ করবে বিনোদনের জন্য, সে জন্যও এটা প্রয়োজন।

৩. বারিধারা পার্কের ভেতরে বেশ চওড়া ওয়াকওয়ে আছে। ওদিকে লোকজনও কম। পক্ষান্তরে গুলশান সাইডে সরু ভাঙাচোরা হাঁটাপথ। বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ এ পথ প্রতিদিন ব্যবহার করেন। লেকের পাড়টিতে চওড়া ওয়াকওয়ে তৈরি করুন। আমাদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ যাঁরা সকাল–বিকেল হাঁটতে বেরোন, তাঁদেরও যাতে স্থান সংকুলান হয়।

৪. লেক পরিষ্কার হলে মাছ চাষ করবেন বলেছেন আপনি। দয়া করে এ কাজটি ভুলেও করবেন না। কিছু মাছের পোনা ছাড়ুন, শৌখিন শিকারিরা মাছ ধরুক। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করলে লেকের পানি আর গোসল করা বা নৌবিহারের যোগ্য থাকবে না।

৫. সবশেষে প্রকল্পে ব্যবস্থা রাখুন অন্তত দু–তিন বছর দিনরাত এক দল পাহারাদার রাখার, যাতে কেউ ময়লা ফেলতে এলে তাঁরা তেড়ে যেতে পারেন। বছর তিনেক এটা করতে পারলে আশা করি এলাকার বাসিন্দা এবং তাঁদের গৃহকর্মীরা উপলব্ধি করবেন যে লেক ময়লা ফেলার ভাগাড় নয়। 

মো. তৌহিদ হোসেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

Related articles

Recent articles

spot_img