আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে আমেরিকার স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে চায় বাংলাদেশি স্টার্টআপ ‘শপআপ’।
রোববার (১৪ জুলাই) রাজধানীর এক হোটেলে ‘ইনসাইট এক্সচেঞ্জ: বিহাইন্ড দ্য সিনস অব এ স্টার্টআপ’ শীর্ষক নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামে এ কথা জানান শপআপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আফিফ জামান।
তিনি বলেন, স্টার্টআপ নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। স্টার্টআপ একটি ব্যবসায়িক মডেল নয়, এটি ব্যবসা শুরু করার একটি উপায়। আমরা খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে নির্মাতাদের সংযোগ করতে সাহায্য করি। আমাদের ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী বিদেশি। এজন্য আমরা প্রথম বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সিকিউরিটিজ ডিলার অটোমেটেড কোটেশন স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে চাই।
আফিফ জামান বলেন, এখন এটা আমাদের স্বপ্ন। এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আমি মনে করি এটি এখনো সম্ভব। আমরা যখন তালিকাভুক্ত হবো তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগে আরও আকৃষ্ট হবে। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করতে পারি, আশা করি আমরা বাংলাদেশের প্রথম তালিকাভুক্ত কোম্পানি হবো।
তিনি আরও বলেন, এ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের কাজের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে কাজ করছি। সবার সহযোগিতায় আমারা এটা অর্জন করতে পারবো।
শপআপের প্রেসিডেন্ট মামুন রশিদ বলেন, আমাদের কাজ বড় উৎপাদক থেকে পণ্য ছোট দোকানে নিয়ে আসা। যাতে তারা সময়মতো এবং ন্যায্য মূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে পারে। যদিও আমরা সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে লেনদেন করি না। আমরা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে উৎপাদকদের সংযোগ করি।
তিনি বলেন, ছোট দোকানের বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা ৩ কোটির ১০ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছি। আমাদের লক্ষ্য তা ৮ কোটিতে উন্নীত করা।
শপআপের কর্মকর্তা শারেক বলেন, পিটার থিয়েল শপআপের অন্যতম বিনিয়োগকারী। তিনি ফেসবুকেও বিনিয়োগকারী ছিলেন। সে সময় তিনি ৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। ফেসবুক থেকে এক বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন। স্টার্টআপের ব্যর্থতার হার প্রায় ৯০ শতাংশ, এরপরও বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করেন। কারণ একটি স্টার্টআপ সফল হলে তাদের সব বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার হয়। পাঁচ বছর পর যাত্রা শুরু, আমরা এখন বলতে পারি আমরা নিরাপদ।
শপআপের আর্থিক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে শারেক জানান, নেট প্রফিট অর্জন করেছে শপআপের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক ইউনিট মোকাম সিপিজি (কনজিউমার প্যাকেজড গুডস)। এ ব্যবসায়িক ইউনিটটি এফএমসিজি পণ্য ও সেবার বিটুবি বিতরণে কাজ করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তারা ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব এবং ২৬ কোটি টাকার অপারেটিং মুনাফা অর্জন করেছে, যা বিগত বছরের তুলনায় ৬ গুণের বেশি প্রবৃদ্ধি।
শপআপ জানায়, তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে এবং এর ৯৫ শতাংশ পিবিটি (প্রফিট বিফোর ট্যাক্স) পজিটিভ। এ সংখ্যা শপআপের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনিরীক্ষিত আর্থিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। সামগ্রিক গ্রুপ শিগগির নেট প্রফিট করবে বলে আশাবাদী।
মোকাম সিপিজি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিতরণ প্ল্যাটফর্ম, যা সারা দেশে ২০০টিরও বেশি বিতরণকেন্দ্র পরিচালনা করছে। এটি বর্তমানে ম্যারিকো, ইউনিলিভার, রবি, বাংলালিংক, জেটিআই, লাফজ, রেমিডিস্ট, এলিট, এসিআই, গ্রামীণফোন, হিমালায়া, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি, অলিম্পিক, রেকিট, আরএসপিএল গ্রুপ, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড, সিজেন্টা, টিকে গ্রুপ এবং আরও অনেক বড় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে সেবা দিয়েছে।
মোকাম সিপিজির সিইও নাজির আহমেদ বলেন, আমরা বাংলাদেশে এফএমসিজি পণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় বিতরণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছি। গত তিন বছরে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট এবং শীর্ষ প্রতিভায় যে ভারী বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেটি ফলপ্রসূ হচ্ছে। এটি আমাদের নেতৃত্বে বিতরণ বিপ্লবের শুরু মাত্র।
কেএসআর/জিকেএস