শামীমা: আপনার গল্পে যে শ্রেণির মানুষকে পাই, কবিতা কিন্তু সে রকম না।
আবুবকর: থ্যাংক ইউ। খুব ধরেছ। আমার কবিতা সত্যিকার অর্থে ঠিক নির্ধারিত একটি লক্ষ্য বা কেন্দ্র—এভাবে এগোয়নি। প্রথম দিকে দেশ, ভাষা, প্রেম, তারপরে প্রচণ্ডভাবে রাজনীতির প্রভাব এবং রাজনৈতিক সেই উত্তেজনা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসা—সব মিলিয়ে আমার কবিতায় আমি তো নতুনত্বের অভিলাষী। কিন্তু প্রেম, চিরন্তন যে উপাদান আমার কবিতায় আছে, তা কিন্তু নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে। আমি প্রচলিত গতানুগতিক ভাষা সহ্য করতে পারি না। কবিতা মৌলিক হওয়া দরকার। চেষ্টা করি করতে। আমার এই বুড়ো বয়সে রাভী নামে একটা কবিতার বই লিখে ফেলি। এগুলো আসলে ভেতর থেকে কাজ করে মাথায়। তারপর জীবনের এই সব চারদিকের ক্ষুদ্রতা, জটিলতা, বাঁচার যে কষ্ট, গ্লানি এবং আরও পরে যে রাজনৈতিক ভণ্ডামি, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, মানুষের যে হতাশা—এগুলো খুব প্রভাব ফেলে। কবিতায় কাজ করে। লেখালেখি অনেক কমে গেছে নানা কারণে। তবে আমার জলরাক্ষস, খরাদাহ—এসব উপন্যাসে জনতার যে সংগ্রামী চেতনা, সেটা এসেছে প্রধানভাবে। আর মুক্তিযুদ্ধের ওপরে আমার একাত্তরের হৃদয়ভস্ম। একাত্তরের স্বাধীনতার পরে মুক্তিযুদ্ধকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, সেই মনের কষ্টে, দুঃখ থেকে লেখা এ উপন্যাস।
শামীমা: আপনার অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের
যেসব লেখক আছেন, তাঁদের দু চার জনের কথা বলেন।
আবুবকর: শেষের দিকে আমার খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা, প্রেমময় ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে, প্রাণের প্রিয়। আর তার আগে বিষ্ণু দে; তাঁর সঙ্গে। বিষ্ণু দে তো তাঁর কবিতার বই, সংবাদ মূলত কাব্য আমাকে উৎসর্গ করেছেন। উৎপল মারা গেলেন কিছুদিন আগে, উৎপলকুমার বসু। খুব মধুর সম্পর্ক। তুমি-তুমির সম্পর্ক উৎপলের সঙ্গে। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গেও আমার মোটামুটি ওঠাবসা ছিল। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং আরও অনেকে। খুব লিখতাম একসময় পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকায়, কলকাতায় পরিচয়সহ অন্যান্য পত্রিকায়।