15.9 C
New York

আমাদের সড়কের অসুখটা রাজনৈতিক, টেকনিক্যাল নয়

Published:

মো. হাদিউজ্জামান: বিশৃঙ্খলা শুরুই হয় রাজধানীতে পরিবহনগুলোর মধ্যে রেষারেষি, পাল্লাপাল্লি থেকে।

একে আমি ক্যানাবালিজম মনে করি। যাত্রী ধরতে গিয়ে কে কাকে খেয়ে ফেলবে, তারই অসম প্রতিযোগিতা। ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। এখনো আমরা সেকেলে, অনেকটা হাতের ইশারায়, বাঁশি বাজিয়ে, হাতে লাঠি দিয়ে, চোখে লেজার লাইট মেরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।

মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো অত্যাধুনিক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেখানে ট্রাফিকব্যবস্থা সেকেলেই রয়ে গেছে। আমরা কেন একটা আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যেতে পারছি না, তার পেছনকার কারণটাও রাজনৈতিক। এই ঢাকা শহরের সড়কে এখনো প্রায় ১৮ সংস্করণের যানবাহন চলছে। রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, ছোট, বড়, হালকা, ভারী, দ্রুতগতি—সব যান একসঙ্গে চলছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বিজ্ঞান বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি সড়কে যানবাহনের সংস্করণ কমিয়ে আনতে পারি, তাহলে লেনভিত্তিক গাড়ি চালানো সম্ভব। সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ করে, যেসব যানবাহন এই গতিসীমায় চালাতে সক্ষম, সেগুলো রেখে, ট্রাফিক সিগন্যালকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনায় এনে, একটা চমৎকার ও আধুনিক সড়ক নেটওয়ার্ক আমরা তৈরি করতে পারি।

আলাদা লেন থাকলে, সময়সূচি ধরে ধরে গণপরিবহন চলার যে দর্শন, সেটা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো।

বাসগুলোকে একটা কোম্পানি বা ছাতার নিচে এনে গণপরিবহনগুলোকে একটা চমৎকার শৃঙ্খলা ও লাভজনক করা যেত। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ঢাকা শহরে যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, তাঁদের ৬০ শতাংশ পথচারী। তাঁদের দুর্ঘটনার পেছনে ভারী যানবাহনের সম্পর্ক আছে। পুরো বিশ্বেই যখন গণপরিবহন যেখানে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি—এই দর্শনে চলে, সেখানে উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি।

এর কারণ হচ্ছে, এর জন্য যে পূর্বপ্রস্তুতি থাকা দরকার ছিল, সেটা আমাদের নেই। সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী আনফিট গাড়ি, অদক্ষ চালক রেখেই আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করেছি। ফলে হোঁচট খেয়েছি। পুরো বিশ্বের জন্য মডেল বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির, সেই ভালো মডেলটাও আমরা নষ্ট করেছি। আমাদের সড়কের অসুখটা রাজনৈতিক, এটা কোনো টেকনিক্যাল অসুখ নয়।

Related articles

Recent articles

spot_img