বিএমইটির তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বছরে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী। সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৩ সালে বিদেশে গেছেন ১৩ লাখের বেশি কর্মী। তবে বিপুল বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্যে অনেক প্রবাসী ‘ব্যর্থ’ হয়ে দেশে ফিরছেন।
দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে সব হারিয়ে, বিদেশে পুলিশের হাতে আটক হয়ে, একদম বাধ্য হয়ে, শূন্য হাতে যাঁরা দেশে ফিরে আসেন; শুধু তাঁদের হিসাবই আছে। কারণ, এমন প্রবাসীর হাতে পাসপোর্ট থাকে না। দেশে ফেরার জন্য দূতাবাস থেকে তাঁদের একটি আউট পাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) সরবরাহ করা হয়। এই আউট পাস নিয়ে ফিরে আসা কর্মীদের হিসাব আছে সরকারি সংস্থার কাছে।
সরকারের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ৮৬ হাজার ৬২১ প্রবাসী। এর মধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ৭১৯ এবং নারী ২ হাজার ৯০২ জন। তবে এর বাইরে যাঁরা পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরেছেন, তাঁদের কোনো হিসাব নেই এ সংস্থার কাছে।
অভিবাসন খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যর্থ অভিবাসনের প্রকৃত চিত্র আরও নাজুক। বছরে এ সংখ্যা লাখের বেশি হবে।
দেশে ফিরে আসা ২১৮ প্রবাসীর ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ চালিয়েছে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠার রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। জরিপের আলোকে তারা বলছে, বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাননি ১৫ শতাংশ কর্মী। ২০ শতাংশ কর্মী চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি। এসব কর্মীর দেশে ফিরে আসা ছাড়া উপায় ছিল না।
রামরুর জরিপে অংশ নেওয়া কর্মীদের ১৫ শতাংশ বিদেশে যাওয়ার ১ মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসেন। আর ৬ মাসের মধ্যে দেশে ফেরেন ২৯ শতাংশ কর্মী। বিদেশে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ধারদেনায় জড়িয়ে যান এসব কর্মী।
অভিবাসন খাতের বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর প্রথম আলোকে বলেন, যে ধরনের কাজে বাংলাদেশি কর্মীরা বিদেশে যাচ্ছেন, সেসব কাজের জন্য অন্যান্য দেশ থেকে দক্ষ কর্মীরা যাচ্ছেন। তাই বিদেশের কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা কমছে। তাঁরা বেশি আয় করতে পারছেন না। আবার অনেকে গিয়ে নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। দক্ষ কর্মী পাঠাতে না পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে না।