20.6 C
New York

মৃত্যুর ৫৮ বছর পর গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন দাবার ‘সুলতান’

Published:

দৃশ্য ৩

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। ইসলামাবাদ। বিশ্ব দাবা সংস্থার (ফিদে) সভাপতি আরকাদে দভরকোভিচ মরণোত্তর গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব তুলে দেন পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকারের হাতে। না, খেতাবটা কাকারের নয়, সেটি মির সুলতান খানের। ফিদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পাঞ্জাবের দাবাড়ু এবং পাকিস্তানের নাগরিক। তাঁর সময়ে তাঁকে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দাবাড়ু বিবেচনা করা হতো। পাঁচ বছরেরও কম সময়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি তিনবার ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। দাবার তত্ত্বজ্ঞান এবং এই খেলার বইপত্র প্রায় না পড়েই বিশ্বের সেরা কয়েকজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছিলেন মির সুলতান খান। তিনি পাকিস্তানের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার।’

সুলতান ১৯৬৬ সালে মারা যান। ৫৮ বছর পর তাঁকে মরণোত্তর গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব দিল ফিদে। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানও পেয়ে গেল তাদের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার। সেটি অবশ্য ভৌগোলিক কারণে। সুলতান যখন দাবার ৬৪ ঘরে সালতানাত কায়েম করেছিলেন সমগ্র উপমহাদেশ তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। সেই সালতানাতেরই শাহেনশাহ হিসেবে সুলতান কখনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাদের মধ্যে সর্বকালের অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃত পোলিশ কিংবদন্তি আকিবা রুবিনস্টেইনকে হারিয়েছিলেন। সেই রুবিনস্টেইন গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়ে যান জীবদ্দশাতেই—১৯৫০ সালে, ফিদে যে বছর থেকে এই খেতাব চালু করেছিল সেবারই। কিন্তু সুলতানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মৃত্যুর পরও। হয়তো পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার লাইনের মতো—‘প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে/সূর্য ডোবে রক্তপাতে।’

সুলতান যদি হন দাবার ‘সূর্য’ তাহলে ৫৮ বছরের প্রতীক্ষায় বুকের ভেতর রক্তপাত না হওয়াই তো অস্বাভাবিক। তবে সুলতান যে খেতাবটা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন, সে কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। সে সময় অনেক বাঙালির মতোই ইউরোপে কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া তাঁর সহ্য হয়নি। মোহাম্মদ সেলিমকে নিশ্চয়ই মনে আছে? সেই যে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ থেকে উঠে আসা খালি পায়ের ফুটবলার, উপমহাদেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে যিনি খেলেছিলেন ইউরোপিয়ান ক্লাবে (সেল্টিক)—স্কটল্যান্ডের আবহাওয়া সহ্য না হওয়ায় এবং দেশের টানে সেলিমও ফিরে এসেছিলেন। সুলতানও তাই। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে যেন ‘মুক্তি পেয়েছিলেন।’

কিন্তু সুলতানের এই গল্প মুক্তির নয়। এ গল্প আসলে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে আবারও লোকচক্ষুর অন্তরালে মিলিয়ে যাওয়ার!

********

Related articles

Recent articles

spot_img