এম হুমায়ুন কবির: বিশ্বে যারা গণতান্ত্রিক দেশ, তারা দুই স্তরে সম্পর্ক রক্ষা করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দেশগুলো চায়, তাদের আদর্শ ও ব্যবস্থা অন্য দেশগুলোতে সম্প্রসারিত হোক। আপনি বললেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ, এটা তাদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয়। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রীয় উপাদানই হচ্ছে নিজেদের শাসনব্যবস্থার ধরন অন্য দেশে সম্প্রসারণ। পশ্চিমা দেশগুলো যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন কিন্তু তারা নিজস্ব মূল্যবোধের বিস্তারের অংশ হিসেবেই বলে।
এর বাইরে আছে কৌশলগত দিক। বর্তমান বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে। এখন এই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থে গণতন্ত্র, ভূরাজনৈতিক কৌশল—সবকিছুকেই কাজে লাগাতে পারে। বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামো যেহেতু এখন ইউরো-আটলান্টিক থেকে ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাই চীনের উত্থান যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমকে চিন্তিত করেছে। তারা এ অঞ্চলে চীনের উত্থান ঠেকাতে চায়। যদিও তারা চীনের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চায় না। এ অঞ্চলকে ঘিরে যেহেতু এখন বিশ্ব ভূরাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে, তাই বঙ্গোপসাগরের দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এর অংশ হয়ে পড়েছে। আমরা চাই বা না চাই বাংলাদেশ এই ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। সবাই চাইছে, বাংলাদেশ তার পক্ষে থাকুক। চীন বাংলাদেশে তার প্রকল্পগুলোকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়, আর যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু দেখতে চায় তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রেক্ষাপটে।
আগেই বলেছি যে গণতান্ত্রিক দেশগুলো কাজ করে দুই স্তরে। একটি মূল্যবোধ, অন্যটি স্বার্থ। ভারত এ অঞ্চলের উদীয়মান শক্তি, কিন্তু বিশ্বরাজনীতির ক্ষমতার খেলায় তারা প্রধান শক্তি নয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় তারা অবশ্যই প্রধান শক্তি। ফলে এখানে তারা আসলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং এ ক্ষেত্রে স্বার্থই বড় হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্র বা মূল্যবোধ এখানে প্রধান নয়, যদিও তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র। এটাই বাস্তবতা।