20.6 C
New York

নতুন সরকারের বড় চিন্তা অর্থনীতি

Published:

রিজার্ভের ক্রমাগত পতনের মুখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। এর দুটি কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন বছরে আরও দুই কিস্তি ঋণ পাওয়ার কথা। এ জন্যও সংস্কার করতে বাধ্য সরকার। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের করছাড় কমানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা, ভর্তুকি হ্রাস, খেলাপি ঋণ কমানো, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করা, ব্যাংক খাতের তদারকিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সুদহারের কাঠামো ঠিক করা; রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি। 

তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, আরও বেশ কিছু খাতে সংস্কার করতে হবে। যেমন সরকারের ঋণ নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনা, সরকারি ব্যয়ের গুণমান বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া, পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছ করা ইত্যাদি। সুতরাং বাস্তবায়ন করতে হবে, এমন কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ১৫ বছর ধরে বিশেষ একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তারাই এখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এ পরিস্থিতিতে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ে লিখেছিলেন, ‘আধুনিক রাষ্ট্রের ভাগ্যবিধাতা শাসকরাও নয়, জনগণও নয়। এ রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ স্বার্থের গোষ্ঠীসমূহ। অর্থনীতিবিদ অলসন এসব গোষ্ঠীকে আখ্যায়িত করেছেন ‘‘বণ্টনমূলক জোট’’। এদের উদ্দেশ্য সমাজের কল্যাণ নয়, আত্মকল্যাণ; এরা উৎপাদন বাড়াতে চায় না, বণ্টনব্যবস্থায় নিজেদের বখরা বড় করতে চায়। এ ধরনের স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের জোট, পেশাদারদের সমিতি এবং কর্মচারী ও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন। যে কোন সংস্কার প্রবর্তিত হলেই কোন না কোন বণ্টনমূলক জোটের স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়। কোন গোষ্ঠীই তাদের স্বার্থের ব্যাপারে আদৌ কোন আপোষ করতে রাজি নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় লেনিনগ্রাডের রণক্ষেত্রে রুশ সৈন্যরা দেশমাতৃকার জন্য যে আবেগ ও ঐকান্তিকতা নিয়ে যুদ্ধ করেছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি হিংস্রতা নিয়ে সংস্কারের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে কায়েমী স্বার্থবাদীরা।’

বাংলাদেশের অবস্থা এখন এ রকমই। ফলে আইএমএফের শর্ত মেনে সংস্কার করা সহজ হবে না। যেমন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপরই বলে দিয়েছেন যে আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় যাঁরা এত দিন ধরে করছাড় পেয়ে আসছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন, ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, সংস্কারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা তাঁরাই। 

Related articles

Recent articles

spot_img