যুদ্ধ-সহিংসতায় কাটা এ বছরের শেষ কটি মাস কেন জানি গাজার হারিয়ে যাওয়া শিশুরা অনেকের মতো আমাকেও দখল করে রেখেছে। তারা আমাদের বাধ্য করেছে সব শিশুকে নিয়ে ভাবতে। আমিও ভাবছি। ভেবে কষ্ট পাচ্ছি, আমাদের দেশের শিশুরাও তেমন ভালো নেই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, প্রতিটি শহরে ছড়ানো–ছিটানো বস্তিগুলোতে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে, স্কুলের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে বাসাবাড়িতে কাজ নেওয়া এবং পথেঘাটে ভাসমান শিশুদের জীবন বলতে যা আছে, তা প্রতিদিন সংগ্রাম করে টিকে থাকা।
তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে হানাহানির কারণে পরিবারবিচ্ছিন্ন বাবাদের সন্তানেরা। আগামী বছরটা তারা কীভাবে কল্পনা করবে? নতুন বছরটা তাদের কাছে কেন অধরা থাকবে?
আমি দেখেছি, একসময় পরিবারের দুঃসময়ে প্রতিবেশীরা পাশে দাঁড়াত, সমবেদনা জানাত, এটা–ওটা দিয়ে সাহায্য করত। এখন বিশেষ করে শহরগুলোতে তা চোখে পড়ে না।
সবাই মিলে সমষ্টিগতভাবে কিছু করার, ভাবার অভ্যাসটা আমরা বহুকাল হয় হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমরা দুই পরিবারের ভেতর কোনো সমস্যা হলেও আর গুরুজনদের নিয়ে নিষ্পত্তি খোঁজার চেষ্টা করি না, তরুণ তুর্কিদের হাতে তলোয়ার তুলে দিয়ে বরং এসপার-ওসপারের দিকে যাই।
পরিবারে যা হয়, সমাজে তা-ই হয়, রাষ্ট্রেও। অথবা শুরুটা হয় সেই সর্ববৃহৎ পরিসরে, শেষটা পরিবারে অথবা ব্যক্তিতে। পরিবার হয়তো বড় ছবি দেখে শেখে। বড় ছবিটা তাই প্রথমে ঠিক করতে হবে। সেটি হোক আগামী বছরের একটা বড় করণীয়। তারপর ছোট ছবিগুলো। ছবিগুলোর অন্তরে থাকে ব্যক্তিমানুষ। সেই মানুষকে ঠিক করবে শিক্ষা আর সংস্কৃতি, যা বড় ছবিটা ঠিক হলে জীবনের ও কর্মের, দিনযাপনের, সব মানবিক সম্পর্কের, সমাজের গতিশীলতার আর বর্তমান-ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেবে, নান্দনিকতা আর মূল্যবোধের যুগল কাঠামোয় ব্যক্তি থেকে নিয়ে দেশটাকে স্থাপন করবে।